'মানবতাবিরোধীদের রক্ষায় যারা চেষ্টা করছে তাদেরও বিচার হবে'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা লালন-পালন ও রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও একদিন বিচার হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

প্রধানমন্ত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তাদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী মানবতাবিরোধী- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছে। বিচার চলমান রয়েছে এবং অনেকগুলো বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। এসব রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পেয়েছে। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। এই কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা লালন-পালন ও রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও একদিন বিচার হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৩ বছরের পাকিস্তানি বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশের আপামর জনসাধারণকে সংগঠিত করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় পাকিস্তানের দোসর জামায়াতসহ ধর্মান্ধ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ লুটতরাজ করে। বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে তারা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানি, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ দেশের মেধাবী সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা ও গুম করে। তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লাহ কায়সার, গিয়াসউদ্দিন, ডা. ফজলে রাব্বি, আবদুল আলীম চৌধুরী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতাসহ আরো অনেকে। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করাই ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের মূল উদ্দেশ্য। স্বাধীনতা বিরোধীরা পরিকল্পিত নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পরাজয়ের জঘন্যতম প্রতিশোধ নেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের এই পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তারা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করে। সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মুক্তমনা, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ, সংখ্যালঘুদের হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন চালায়। এই সন্ত্রাসী-জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে দেশব্যাপী আগুন সন্ত্রাস চালায়, মানুষ পুড়িয়ে মারে এবং পরিকল্পিত নাশকতা চালায়। এখনও নানাভাবে তারা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে প্রধানমন্ত্রী দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ’৭১-এর ঘাতক, মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-মৌলবাদীচক্র এবং গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তির যে কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বপালনের আহ্বান জানান।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতের যেখানেই যাই অমিতাভ বচ্চনের মতো সম্মান পাই: কঙ্গনা May 06, 2024
img
গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির আগ্রহ কোনদিনই ছিল না : ওবায়দুল কাদের May 06, 2024
img
গ্রামাঞ্চলে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর May 06, 2024
img
দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার May 06, 2024
img
বৃষ্টির দিনে ঘরের যত্ন নেবেন যেভাবে May 06, 2024
img
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত May 06, 2024
img
মিল্টনের আশ্রমে থাকা শিশু-বৃদ্ধদের দায়িত্ব নিচ্ছে শামসুল হক ফাউন্ডেশন May 06, 2024
img
১৪ দিনে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু ১৫ জনের : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর May 06, 2024
img
সম্পদ অর্জনে এমপিদের চেয়ে চেয়ারম্যানরা এগিয়ে, টিআইবির বিশ্লেষণ May 06, 2024
img
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি May 06, 2024