বিশ্বকাপ জয়ের কারণে অনেকের চোখে এখন এককভাবেই সর্বকালের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। যেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তকমার অপূর্ণতা ছিল এতদিন, গতকাল আরাধ্য সেই বিশ্বকাপ শিরোপায় চুমু এঁকে সেই স্বাদ আস্বাদন করেছেন লিওনেল মেসি। সেই সাথে তাকে নিয়ে উঠা সব প্রশ্নের জবাবও যেন দিয়ে দিয়েছেন।
কি করেননি মেসি এই বিশ্বকাপে?
অধিনায়কোচিত নেতৃত্ব দিয়েই দলকে জিতিয়েছেন, নিজেও জিতেছেন। দলের ৩৬ বছরের খরাও ঘুচিয়েছেন। সেই সাথে জিতে নিয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরার তকমাও, জিতেছেন গোল্ডেন বল। পাশাপাশি বিশ্বকাপে অসংখ্য রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন মেসি। যার ফলে নিজের নাম আরো সমৃদ্ধ করেছেন ইতিহাসের সোনালী পাতায়।
কী করেছেন মেসি, চলুন দেখে আসি-
• ফাইনালে মাঠে নামামাত্রই দারুণ এক রেকর্ড হয়েছে লিওনেল মেসির। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৬ ম্যাচ খেলার কীর্তি ছুঁয়েছেন মেসি। ফাইনালের ম্যাচের আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডে জার্মানির লোথার ম্যাথিউসের সাথে যৌথভাবে শীর্ষে ছিলেন তিনি। দু’জনেই খেলেন ২৫টি ম্যাচ। ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে পা রাখার সাথে সাথেই এগিয়ে যান মেসি। ফলে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি এখন এককভাবে এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের দখলে।
• ফাইনালের আগ পর্যন্ত ফুটবল বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির গোলসংখ্যা ছিল ১১টি। এর আগে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল করেছিলেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। তার গোলসংখ্যা ছিল ১০টি। এই বিশ্বকাপেই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে নিজের ১১তম গোল করার মাধ্যমে স্বদেশি গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড নিজের দখলে নেন তিনি। তবে গতকাল ফাইনালে জোড়া গোল করে সর্বোচ্চ গোলের দৌঁড়ে মেসি ছুঁয়ে ফেলেছেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলেকে। পেলে বিশ্বকাপে করেন ১২ গোল। বিপরীতে লিওনেল মেসির মোট গোল সংখ্যা এখন ১৩টি।
• গতকাল ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচ জেতার ফলে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৭টি ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেলেন লিওনেল মেসি। এর আগে জার্মান স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসাও বিশ্বকাপে ১৭টি ম্যাচ জিতেছিলেন। ফলে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে যুগ্মভাবে সবথেকে বেশি ম্যাচ জয়ী খেলোয়াড় হলেন মেসি ও ক্লোসা।
• ২০০৬, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আসরগুলোতে গোল পেয়েছেন মেসি। শুধু ২০১০ সালেই তার পা থেকে কোনো গোল আসেনি। বিশ্বকাপের ভিন্ন ভিন্ন চার আসরে গোল করার বিরল কীর্তি গড়েছেন মেসি। তবে উল্লেখিত পাঁচ আসরেই গোলের স্বাদ পেয়েছেন মেসির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
• গতকাল ফাইনালের পুরোটা সময়ই মাঠে ছিলেন মেসি। ম্যাচের ২৪তম মিনিট অতিক্রান্ত হওয়া মাত্রই নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সময় খেলার রেকর্ড ভাঙেন তিনি। যে রেকর্ডটি আগে ছিল ইতালিয়ান লিজেন্ড পাওলো মালদিনির। মালদিনি বিশ্বকাপে খেলেছিলেন ২২১৭ মিনিট। বিপরীতে মেসি খেলেছেন মোট ২৩১৪ মিনিট।
• একমাত্র ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে গোল করার কীর্তি গড়েছেন মেসি। ফ্রান্সের আগে নকআউট পর্বে ক্রোয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি করে গোল ছাড়াও গ্রুপ পর্বে সৌদি আরব ও মেক্সিকো ম্যাচেও গোল করেছিলেন তিনি।
• এবারের বিশ্বকাপে মেসির গোলসংখ্যা ৭টি। রি ৭ গোলের ৪টি এসেছে পেনাল্টি থেকে। এর আগে এক আসরেই পেনাল্টি থেকে ৪ গোল করেছেন কেবল ডাচ ফুটবলার রব রেনসেনব্রিন ও পর্তুগালের ইউসেবিও।
• ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলে অবদান রাখা খেলোয়াড় এখন মেসি। এখন পর্যন্ত ২১ গোলে অবদান রেখেছেন তিনি। যেখানে ১৩টি জালে জড়িয়েছেন নিজে ও সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ৮টি গোল।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ১১ বার ম্যাচ সেরা হয়েছেন মেসি। কাতার বিশ্বকাপেই সাত ম্যাচ খেলে পাঁচটিতে ম্যাচসেরা হন তিনি। উল্লেখ্য, ২০০২ আসর থেকে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি দেয়া শুরু হয়।
• নকআউট পর্বে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্টের রেকর্ডে পেলের পাশে বসেছেন মেসি। নক আউট পর্বে দু’জনেরই অ্যাসিস্ট ৬টি।
• একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ভিন্ন পাঁচ আসরে অ্যাসিস্ট এর কীর্তি গড়েছেন মেসি।
• এছাড়া এবারের বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন মেসি। তার হাতে উঠেছে গোল্ডেন বল। এর আগে ২০১৪ সালেও গোল্ডেন বল জেতেন তিনি। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন দু’টি গোল্ডেন বল।
• বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ড গড়েছেন মেসি। কাতার বিশ্বকাপে ৩৫ বছর বয়সে ৭ গোল করেছেন তিনি।