সর্বজনীন পেনশন বিল সংসদে পাস

দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস হয়েছে। এর মাধ্যমে ৬০ বছর পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন নাগরিকরা। এই সুবিধা পেতে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকদের নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে হবে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাাল বিলটি সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন।

গত বছরের ২৯ আগস্ট বিলটি সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী। পরে সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বর্তমানে দেশে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পেলেও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। সরকার গঠনের পর সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা সবার জন্য এ সুবিধা চালু করার কথাও বলেন।

বিলে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম অনুযায়ী নির্ধারিত চাঁদা নিয়মিত দেওয়ার শর্তে একজন ব্যক্তির ৬০ বছর পূর্তিতে আজীবন বা পেনশনে থাকাকালীন চাঁদাদাতার মৃত্যুজনিত কারণে তার নমিনিকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাসিক হারে পেনশন দেওয়া হবে।

চাঁদার হার কত হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আইন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি নির্ধারণ করবে। মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেয়া যাবে এবং অগ্রিম ও কিস্তিতেও চাঁদা দেয়ার সুযোগ থাকবে।

সর্বজনীন পেনশনে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক যুক্ত হতে পারবেন। তবে বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্বদেরও এর আওতায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিলে একটি পাঁচ সদস্যের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে, যার প্রধান হবে নির্বাহী চেয়ারম্যান। এদের নিয়োগ করবে সরকার। সরকারের অনুমোদন নিয়ে এ কর্তৃপক্ষ ঋণ নিতে পারবে বলে বিলে বলা হয়েছে।

পেনশন কার্যক্রম পরিচালনায় বিলে ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এর সদস্য হবেন। পর্ষদের সদস্য সচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।

বিলে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেয়া হবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবে।
একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন বলে বিলে বিধান রাখা হয়ছে।

এতে বলা হয়েছে, পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেয়ার আগে মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
পেনশন তহবিলে জমা দেয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন, যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে।

পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে এবং পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে।
বিলে বলা হয়েছে, নিম্ন আয় সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে।

বিলে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি অথবা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা পেনশন ব্যবস্থার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দ্বিতীয় সংসার ভেঙে যাওয়া নিয়ে মুখ খুললেন সালমা Dec 31, 2025
img
তারেক-শফিকুর-নাহিদের চেয়ে আয় বেশি নুরের Dec 31, 2025
img
২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পেতে রেকর্ড সংখ্যক আবেদন Dec 31, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের স্পিকারের সাক্ষাৎ Dec 31, 2025
বেগম জিয়াকে নিয়ে স্মৃতিচারণে লাখো জনতার ভালোবাসায় বিদায়ী সমাবেশ Dec 31, 2025
দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েত Dec 31, 2025
হারিয়ে যাওয়ার কথা মনে করালেন অভিনেতা আরশ খান Dec 31, 2025
img
রাহার জন্য বড় সিদ্ধান্ত, বলিউড থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন আলিয়া ভাট Dec 31, 2025
img
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর নেই Dec 31, 2025
img
নতুন বছরে স্বর্ণের দামের সুখবর দিল বাজুস Dec 31, 2025
img
একযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৭ কমিশনারকে বদলি Dec 31, 2025
img
চট্টগ্রামের দর্শকদের জন্য মিঠুর দুঃখ প্রকাশ Dec 31, 2025
img
কারাগারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আ. লীগ নেতার মৃত্যু Dec 31, 2025
img
খালেদা জিয়ার জানাজা আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে Dec 31, 2025
img
চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত অনলাইনে রিটার্ন ৩০ লাখ ছাড়াল Dec 31, 2025
img
চিকিৎসার অভাবেই দেশনেত্রীর মৃত্যু, এই দায় হাসিনার: নজরুল ইসলাম খান Dec 31, 2025
img
বলিউডের অপেশাদারিত্ব নিয়ে মুখ খুললেন কাল্কি Dec 31, 2025
img
১৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে সিকান্দার রাজার ছোট ভাই মাহাদি Dec 31, 2025
img
পোস্টাল ভোট দিতে সময় বাড়াল ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত, নিবন্ধন ১১ লাখের বেশি Dec 31, 2025
img
বছরশেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনিন্দিতা রায় চৌধুরীর বিশেষ বার্তা Dec 31, 2025