ধ্বংসস্তূপের নিচে একজন মানুষ কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে?

তুরস্ক ও সিরিয়ায় সোমবারের ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর এখনও যারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে, তাদেরকে জীবন্ত অবস্থায় উদ্ধারের সময় ক্রমশই ফুরিয়ে আসছে।

এই দুটো দেশসহ সারা বিশ্বের উদ্ধার-কর্মীরা, যেখানেই কারো বেঁচে থাকার সামান্য চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই খুব দ্রুত ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তার নিচ থেকে লোকজনকে বের করে আনার জন্য বিরামহীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এরকম ধ্বংসস্তূপের নিচে একজন মানুষ ঠিক কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা নির্ভর করে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর।

ভবনটি যখন ধসে পড়ে তখন তার অবস্থান কোথায় ছিল, তিনি যেখানে চাপা পড়ে আছেন সেখানে বাতাস ও পানি আছে কি না, সেখানকার জলবায়ু, আবহাওয়ার অবস্থা এবং ওই ব্যক্তির শারীরিক সক্ষমতা এসবের ওপরেই নির্ভর করে ওই ব্যক্তি কতক্ষণ সেখানে বেঁচে থাকতে পারবেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুর্যোগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু এর চেয়ে আরো বহু সময় পরেও ধ্বসংস্তূপের নিচ থেকে লোকজনকে জীবন্ত অবস্থায় উদ্ধারের নজির রয়েছে।

সাধারণত দেখা গেছে বিপর্যয়ের পাঁচ থেকে সাতদিনের মধ্যে জাতিসংঘ উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে। প্রথম কিম্বা দ্বিতীয় দিনে কাউকে জীবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব না হলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরকম পরিস্থিতিতে ধ্বংসস্তূপের নিচে একজনের বেঁচে থাকার জন্য কোন কোন বিষয় জরুরি?

সচেতনতা ও প্রস্তুতি

ভূমিকম্প কখন হবে অথবা একটি ভবন কখন হঠাৎ করে ধসে পড়বে সেটা আগে থেকে অনুমান করা সহজ নয়। কিন্তু তার পরেও এরকম জরুরি পরিস্থিতিতে আপনি কোন জায়গায় অবস্থান নিবেন বেঁচে থাকার জন্য সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

একটি ভাল জায়গা বেছে নিয়ে সেখানে অবস্থান করতে পারলে শারীরিকভাবে যেমন নিরাপদ থাকা যাবে তেমনি সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাসও থাকতে পারে।

“এই কৌশলকে বলা হয় ড্রপ, কভার এন্ড হোল্ড। যেখানে বাতাস আসতে পারে সেরকম একটি জায়গায় আশ্রয় নিলে সেটি হবে বেঁচে থাকার জন্য উপযোগী পরিবেশ,” বলেন তুরস্কে একটি উদ্ধারকারী সমিতির সমন্বয়কারী মুরাত হারুন অনগোরেন।

‘ড্রপ, কভার এন্ড হোল্ড’ কথাটির অর্থ হচ্ছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ুন, টেবিল অথবা এরকম কোনো জিনিসের নিচে আশ্রয় নিন এবং ভূমিকম্প না থামা পর্যন্ত কিছু একটা শক্ত করে ধরে রাখুন।

“জরুরি পরিস্থিতিতে কী করতে হবে সেবিষয়ে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা (ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের আগে) খুব গুরুত্বপূর্ণ যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়,” বলেন তিনি।

“ধ্বংসস্তূপের নিচে আপনি কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারবেন এসব বিষয়ের ওপর সেটা নির্ভর করবে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কর্মসূচির টেকনিক্যাল অফিসার ড. জেতরি রেগমিও এধরনের প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন।

“শক্ত একটি ডেস্ক কিম্বা টেবিলের নিচে- এরকম নিরাপদ একটি স্থানে আশ্রয় নিলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। এখানে কোনো কিছুর নিশ্চয়তা নেই। কারণ প্রত্যেকটি জরুরি অবস্থা আলাদা ধরনের। তবে উদ্ধারকাজ প্রাথমিকভাবে কতোটা সফল হবে সেটা নির্ভর করে এবিষয়ে স্থানীয় লোকজনের সচেতনতা ও প্রস্তুতির ওপর,” তিনি বলেন।

পানি ও বাতাস

ধসে পড়া একটি ভবনের নিচে আটকে থাকা অবস্থায় বেঁচে থাকার জন্য সেখানে বাতাস ও পানির সরবরাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এটা আপনি কতোটুকু আহত হয়েছেন তার ওপর। যদি প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ যদি গুরুতরভাবে জখম না হয়, এবং সেখানে নিঃশ্বাস গ্রহণের জন্য বাতাস থাকে, তাহলে তাকে এরপরেই যেটা চেষ্টা করতে হবে তা হলো তার শরীরে যাতে যথেষ্ট পানি থাকে।

নিবিড় যত্ন বিষয়ক গবেষক এবং যুক্তরাষ্ট্রে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড এডওয়ার্ড মুন বলছেন, “পানি ও অক্সিজেনের অভাবে বেঁচে থাকার কঠিন হয়ে পড়তে পারে।”

“একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির শরীর থেকে প্রতিদিন ১.২ লিটার পানি বের হয়ে যায়,” বলেন তিনি।

“মূত্রত্যাগ, নিঃশ্বাসের সঙ্গে বাষ্প এবং ঘামের মাধ্যমে পানি বের হয়ে যায়। একজন মানুষের শরীর থেকে যখন আট লিটার পানি বের হয়ে যায় তখন সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।”

কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পানি ছাড়া মানুষ তিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

Share this news on:

সর্বশেষ