পদ্মাসেতু‌র পাটাতনে বসেছে সড়ক পথের প্রথম স্ল্যাব

পদ্মাসেতুতে স্প্যান বসানোর পাশাপাশি এবার শুরু হয়েছে সেতুর উপরের পাটাতনে সড়ক পথের জন্য স্ল্যাব বসানোর কাজ। সেতুর যে স্প্যানগুলো এরই মধ্যে বসে গেছে তার উপরের পাটাতনে বসানো হচ্ছে স্ল্যাব।

মঙ্গলবার সকালে পদ্মাসেতুর জাজিরা প্রান্তে ৪২ নম্বর পিলারের গোড়ায় সড়ক স্ল্যাব বসানো হয়। যদিও এর আগেই সেতুর নিচের পাটাতনে রেল লাইনের স্ল্যাব বসানো শুরু হয়েছে।

সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৪২ নম্বর পিলারের গোড়ায় প্রথম স্ল্যাবটি বসানো সফলভাবে শেষ করেছেন প্রকৌশলীরা। এর মধ্য দিয়ে এই প্রথম দৃশ্যমান হলো চারলেন সড়ক পথের একাংশ।

পদ্মা‌সেতু নির্মাণকা‌রী প্র‌তিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজের এক কর্মকর্তা জানান, এমন মোট ২ হাজার ৯৩২ টি স্ল্যাবে পদ্মাসেতুর উপর তৈরি হবে সড়ক পথ। যা বিস্তৃত হবে পুরো সোয়া ছয় কি‌লো‌মিটার পর্যন্ত।

সেতু সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পর্যন্ত ৫’শটিরও বে‌শি স্লাব তৈ‌রি করে মাওয়া কুমার‌ভোগ কন্সট্রাকশন ইয়া‌র্ডে রাখা হ‌য়ে‌ছে। সেখান থে‌কে স্ল্যাবগুলো নিয়ে জা‌জিরা প্রান্ত থে‌কে বসা‌নো শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, সোয়া ছয় কি‌লো‌মিটার সেতু‌তে রেলওয়ে স্লাব বসবে ২৯৫৯ টি। যার মধ্যে ১৫২০ টি স্লাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। যার মধ্যে ১৯২ টি স্লাব বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাসেতুর মোট ৮টি স্প্যান বসানো শেষ হয়েছে। মার্চ মাসেই পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে বসানো হতে পারে আরও দুটি স্প্যান। এর মধ্যে ২১ মার্চ সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর একটি স্প্যান বসানো হতে পারে। এরপর ২৭ অথবা ২৮ মার্চ মাওয়া প্রান্তে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর আরও একটি স্প্যান বসানো হবে। এই দুটি স্প্যান বসলে সেতুর দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমান হবে। আর নবম স্প্যানটি বসানো হলে জাজিরা অংশে পদ্মাসেতু এগিয়ে যাবে ১.২ কিলোমিটার পর্যন্ত।

সেতুর প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, এই সপ্তাহে জাজিরায় একটি স্প্যান বসতে পারে। চলতি মাসে আরও একটি স্প্যান বসানোর বিষয়ে ঠিকাদারদের প্রোগ্রাম রয়েছে।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। ২০১৮ সালের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ স্প্যান বসে। আর ২০১৮ সালের শেষ দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর স্তম্ভের ওপর একমাত্র স্প্যানটি বসানো হয়।

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। পরে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে থাকলেও প্রকৃতির প্রতিকূলতায় তা কিছুটা পিছিয়েছে। বর্তমান হিসাব মতে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে পদ্মাসেতু।

প্রকল্পের বর্তমান ব্যয় প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণের দায়িত্বে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: