আমেরিকার সঙ্গে সংলাপ নাকচ করলো চীন

সিঙ্গাপুরে আসন্ন প্রতিরক্ষা সম্মেলনে চীনা ও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বেইজিং। দক্ষিণ চীন সাগরে সাম্প্রতিক উত্তেজনার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে দুই দেশ।

ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কের অবনতি যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ সত্ত্বেও চীনের সঙ্গে সংলাপের পথ বন্ধ করতে চায় না ওয়াশিংটন। অথচ সম্প্রতি চীন দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে সরাসরি সাক্ষাতের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে তেমনই বার্তা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ চীন সাগরের উপর একটি চীনা যুদ্ধবিমানের পাইলট এক মার্কিন নজরদারী বিমানের সামনে দিয়ে বিপজ্জনকভাবে চলে যাবার ফলে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে ওয়াশিংটন সরাসরি চীনের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। চীনের অভিযোগ, মার্কিন বিমানটি এক সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকায় প্রবেশ করেছিল।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেইজিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বর্তমান কঠিন পরিস্থিতির জন্য সরাসরি অ্যামেরিকাকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন প্রশাসন একদিকে যোগাযোগ আরও নিবিড় করার কথা বলে, অন্যদিকে সে দেশ চীনের উদ্বেগ উপেক্ষা করে কৃত্রিমভাবে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে পারস্পরিক আস্থার ক্ষতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে চীনের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লয়েড অস্টিনের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছে চীন।

অস্টিন চীনের ‘প্ররোচনামূলক' আচরণের সমালোচনা করে বেইজিংয়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করেছেন। আমেরিকা এক নজরদারি বিমানের কাছে চীনা বিমানের ‘অপ্রয়োজনীয় আগ্রাসী উড়াল' সম্পর্কে ওয়াশিংটন আগেই ক্ষোভ জানিয়েছিল। অস্টিন বলেন, তিনি আগেও সংকট এড়াতে বিশাল সামরিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে সংলাপের পথ খোলা রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।

এশিয়া মহাদেশে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের ঠিক আগে ওয়াশিংটন ও বেইজিং-এর মধ্যে এমন শীতল সম্পর্ক বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। আগামী শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ‘শাংগ্রি লা ডায়ালগ' নামের এই সম্মেলনে ৪৯টি দেশের শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা, সামরিক অফিসার, কূটনীতিক, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও প্রতিরক্ষা কোম্পানির কর্ণধাররা মিলিত হচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন।

এশীয়-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন। তবে এই সম্মেলন চলাকালীন লোকচক্ষুর অন্তরালে অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিরল সুযোগ বিশেষ গুরুত্ব পায়।

ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা এবং উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র কর্মসূচি এশিয়া তথা বাকি বিশ্বের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ চীন সাগর ও পূর্ব চীন সাগরে চীনসহ একাধিক দেশের মধ্যে সীমা নিয়ে বিরোধও গুরুত্ব পাচ্ছে। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার কোনো প্রতিনিধি সিঙ্গাপুরের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। তবে চীন ও আমেরিকা প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার সম্ভাবনা বাতিল হলেও সম্মেলনে তাঁদের মধ্যে সাক্ষাত ও সংলাপের সম্ভাবনা রয়েছে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
“দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকে আরো ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন “ - শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল May 19, 2024
img
৭ উদ্যোক্তার হাতে জাতীয় এসএমই পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী May 19, 2024
img
ঢাকায় আসছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং May 19, 2024
img
তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী May 19, 2024
img
জীবন বাঁচাতে রাফা ছেড়েছেন ৮ লাখ ফিলিস্তিনি : জাতিসংঘ May 19, 2024
img
পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করলেন বাবর আলী May 19, 2024
img
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন : আজ মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী May 19, 2024
img
বেরিয়ে এলো জুজুৎসুর নিউটনের ‘ভয়ংকর’ যৌন নিপীড়নের তথ্য May 19, 2024
img
চেন্নাইকে বিদায় করে টানা ছয় ম্যাচ জিতে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু May 19, 2024
img
রাসায়নিক খাতের উন্নয়নে দেশেই কারখানা তৈরি করতে চান ব্যবসায়ীরা May 19, 2024