দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন শুরু আজ

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুই দিনব্যাপী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ শনিবার। এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে অতিথিরা ইতোমধ্যে দিল্লিতে পৌঁছেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দিল্লিকে পৌঁছান। এই সম্মেলনকে ঘিরে দিল্লির নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করা হয়েছে।

সম্মেলনের প্রথম দিন মোদি যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি ও ইতালির নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। সম্মেলন চলাকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের ১৫টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে শুক্রবার।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শক্তিশালী সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকায় এবারের সম্মেলন থেকে একটি যৌথ ঘোষণা আসবে কিনা, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল যৌথ ঘোষণার সম্ভাবনা নিয়ে কিছুটা শঙ্কার কথা শুনিয়েছেন।

দিল্লিতে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান মিশেল বলেন, একটি যৌথ ঘোষণা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়া বেশ কঠিন। এখনো দর কষাকষি চলছে। এ অবস্থায় আমি এমন কিছু বলতে চাই না, যা যৌথ ঘোষণার চেষ্টাকে ব্যহত করে। আমরা ভারতের চেষ্টার পাশে রয়েছি।

যৌথ ইশতেহার প্রকাশ না হওয়ার শঙ্কার মূলে রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিয়ে ইশতেহারে কী ধরনের কথা থাকবে, তা নিয়ে পশ্চিমা দেশ এবং রাশিয়া-চীনের মধ্যে মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা চায় ইশতেহারে রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার কঠিন সমালোচনা করা হোক এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে সব রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হোক।

অন্যদিকে রাশিয়া চায়, ইশতেহারে তাদের অবস্থানের প্রতিফলন থাকতে হবে। এ রকম না থাকলে তারা যৌথ ইশতেহারে সই করবে না। গত ১ সেপ্টেম্বর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এটা স্পষ্ট করে বলেছেন।

অন্যদিকে চীনের দাবি ইশতেহারে ভূরাজনৈতিক কোনো বিষয় থাকা চলবে না। কারণ জি-২০ অর্থনীতিবিষয়ক জোট। এতে অর্থনীতিবিষয়ক এজেন্ডার কথাই শুধু থাকবে।

ইউক্রেন হামলার পর গত বছর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০-এর সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখনও যৌথ ইশতেহার নিয়ে বেশ হইচই হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন হামলার মৃদু সমালোচনা মেনে নিতে সম্মত হয় মস্কো। ফলে বাদ পড়তে পড়তেও তখন যৌথ ইশতেহার সম্ভব হয়।

তার আগে ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয়। তখনও জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলনে যৌথ ইশতেহার নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা-ও সম্ভব হয়েছিল।

কিন্তু ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের অবস্থান বদলেছে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, ইশতেহারে যুদ্ধের প্রকৃত পটভূমি থাকতে হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর গত দুয়েক মাসে যৌথ ইশতেহার নিয়ে বেশ কয়েকবার মন্তব্য করেছেন। সর্বশেষ বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভারতের এক গণামধ্যমকে জয়শঙ্কর বলেন, ’এবারের সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট থাকছেন না। তার পরিবর্তে দেশটির প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। এতে করে আমাদের যৌথ ইশতেহার ঘোষণায় কোনো সমস্যা হবে না।’

এবারের সম্মেলনে যৌথ ইশতেহার বিষয়ে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ট্রিস্টান নেইলর বলেন, ’যৌথ ইশতেহার নিয়ে ভারতের বিশেষ কিছু করার নেই। কারণ জোটের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো ইউক্রেন যুদ্ধের মতো কিছু মৌলিক বিষয়ে একমত হতে পারছে না।’

১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জি-২০-এর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সব শীর্ষ সম্মেলনের শেষের দিন একটি যৌথ ঘোষণা এসেছে। এটা আয়োজক দেশের সক্ষমতাকে নির্দেশ করে। জি-২০ এর মতো শক্তিশালী কোনো জোট শীর্ষ বৈঠক থেকে একটা যৌথ ঘোষণার ব্যবস্থা করতে না পারলে তা সেই দেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়। ভারত এ ধরনের ব্যর্থতায় নাম লেখাতে কোনো মতেই চাইবে না।

Share this news on: