বেরোবির ছাত্রলীগ সভাপতির অনৈতিক রাজকীয় বসবাস, রয়েছে হলের সিট বানিজ‍্যর অভিযোগ

আবাসিক হলে রংপুর বেগম রোকেয়া ছাত্রলীগের সভাপতি পমেল বড়ুয়ার রাজকীয় বসবাস। পুরো রুমে পাতানো লাল কার্পেট, দামি সোফা। ঝুলছে দামি পর্দাও। ৮ জনের থাকার রুমে থাকেন একাই। শুধু তাই নয়, রুমের সামনে ঝুলানো নেমপ্লেটও। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট বানিজ‍্যর অভিযোগও। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলীশান কক্ষটি কোন কর্পোরেট অফিস কিংবা ব্যক্তিগত বাসা নয়। এটি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩০৬ নম্বর কক্ষ। এখানেই বাস করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া। 

যেখানে হলে এক রুমেই গাদাগাদি করে আছেন ছাত্ররা সেখানে ছাত্রলীগের সভাপতি অনৈতিকভাবে দখল করে আছেন একাই একটি রুম। শুধুই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে সীমাবদ্ধ নয় পোমেল বড়ুয়া। গত সাত বছর থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হলের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির পদও ধরে আছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, যেদিন হল খুলে সেদিন আমি উঠতে পারি নাই বাড়িতে সমস্যা থাকার কারনে। পরে আমার রুম মেট বলে তোমার বেডে আরেকজনকে তুলে দিছে। তখন আমি হলে এসে ওই ছেলেকে জিগ্যেস করলাম আমার লিগ‍্যাল সিটে তুমি কে? পরে সে বলে পমেল বড়ুয়া ভাইয়ের ছেলেরা তুলে দিছে। আমি সিট চাইলে আমার কাছে টাকা দাবি করে পমেল বড়ুয়া গ্রুপের সদস্যরা। টাকা না দিতে চাইলে তারা আমাকে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও দেয়।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি পমেল বড়ুয়া বলেন, প্রথমে ক‍্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে সুর পাল্টিয়ে অনৈতিকভাবে হলে থাকার কথা স্বীকার করলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি। জানালেন দুই বছর আগে পড়াশুনা শেষ হলেও রাজনৈতিক কারনেই থাকতে হয় হলে। পাশাপাশি ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ায় দায়িত্বের জায়গা থেকে হলে আছি কিন্তু এটা অনৈতিক।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিক ভাবে এটা সঠিক নয়। নিজের জায়গা থেকে যদি বলতে হয় অনৈতিক ভাবে আছি হলে। তবে ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রে কিছু দায়িত্বের ক্ষেত্রে হলে আছি। তবে এটা সঠিক নয়। আর টাকা নিয়ে হলে সিট দেয়ার বিষয়টি তিনি মিথ‍্যা বলে দাবি করেন।

এদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট
ড. বিজন মোহন চাকী  বলেন, 
ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার কারনেই মিলছে অন‍্যের সিট দখল করে থাকার মত সুযোগ-সুবিধা। যেহেতু একটা কমিটিতে আছে সে এজন্য হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই সুযোগ টা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এরকম কোন নিয়ম নাই কেউ পড়াশুনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও হলে থাকবে। আর সিট দিয়ে টাকা নেয়া সে এটা মোটেও করতে পারে না। এরকম আমাদের কাছে অভিযোগ আশার সাথেই আমার ব‍্যবস্থা নিব।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট সংখ‍্যা ৩০৪টি। বৈধভাবে হলে ২০০ জন ছাত্র থাকলেও বাকি ১০৪ জন রয়েছে অবৈধভাবে বা ক্ষমতার দাপটে।

এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৩১ জুলাই লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী পোমেল বড়ুাকে সভাপতি ও রসায়ন বিভাগের মাহফুজুর রহমান শামীমকেগ সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

Share this news on: