খলিফা হাফতার: সিআইএ সমর্থিত লিবিয়ান নেতা

খলিফা হাফতার গত ৪০ বছর ধরেই লিবিয়ার রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এই চার দশকে তার অনেক উত্থান-পতন হয়েছে।

কখনো তিনি ছিলেন লিবিয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রের কাছাকাছি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কখনো তাকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছে। পরে আবার তার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ক্ষমতার কেন্দ্রে।

খলিফা হাফতারের অধীনে থাকা বাহিনী এখন লিবিয়ার প্রধান তেল টার্মিনালগুলোর দখল নিয়েছে। এর ফলে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর টবরুকের পার্লামেন্টের হাতে (এই পার্লামেন্টকে স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সমাজ) দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তেল সম্পদের নিয়ন্ত্রণ।

১৯৪৩ সালে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর আজডাবিয়ায় খলিফা হাফতারের জন্ম। ১৯৬৯ সালে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সেনা কর্মকর্তারা রাজা ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যূত করে ক্ষমতা দখল করেন, তিনি ছিলেন তাদের একজন।

পতন এবং নির্বাসন

গাদ্দাফির শাসনামলে খলিফা হাফতার বেশ দ্রুত ওপরের দিকে উঠে যান। ১৯৮০’র দশকে লিবিয়ার বাহিনী যখন প্রতিবেশী দেশ চাদে সংঘাতে লিপ্ত, তখন তাকে সেই লড়াইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

তবে এটিই খলিফা হাফতারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ফ্রান্সের সমর্থনপুষ্ট চাদিয়ান বাহিনীর হাতে তার বাহিনী পরাজিত হয়। খলিফা হাফতার এবং তার বাহিনীর ৩০০ জন সৈন্য ১৯৮৭ সালে চাদিয়ান বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।

লিবিয়া যে চাদে যুদ্ধ করতে বাহিনী পাঠিয়েছে, গাদ্দাফি বরাবরই তা অস্বীকার করছিলেন। কাজেই যখন খলিফা হাফতার এবং তার বাহিনী চাদের সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়লেন, গাদ্দাফি তাদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানালেন।

এটি খলিফা হাফতারকে সাংঘাতিক বিক্ষুব্ধ করলো। পরবর্তী দুই দশক ধরে তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ালো কিভাবে গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যূত করা যায়, সেই চেষ্টা করা।

সেসময় খলিফা হাফতার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছিলেন। সেখান থেকেই চলছিল তার গাদ্দাফিবিরোধী তৎপরতা।

তিনি থাকতেন সিআইএ'র সদর দপ্তরের খুব কাছে। তার সঙ্গে সিআইএ'র বেশ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলেই মনে করা হয়। গাদ্দাফিকে হত্যার বেশ কয়েকটি চেষ্টায় সিআইএ তাকে সমর্থন দেয়।

নির্বাসন থেকে দেশে ফেরা

২০১১ সালে লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থান শুরু হয়। খলিফা হাফতার এ সময় দেশে ফিরে আসেন। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহী বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক ছিলেন তিনি।

তবে গাদ্দাফির পতনের পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাফতারের কথা আর তেমন শোনা যায়নি।

২০১৪ সালে হঠাৎ আবার খলিফা হাফতারকে দেখা গেল টেলিভিশনে। সেখানে তিনি তার ভাষায়, জাতিকে রক্ষার এক পরিকল্পনা হাজির করলেন এবং নির্বাচিত পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানালেন।

তখনও পর্যন্ত জেনারেল ন্যাশনাল কংগ্রেস (জিএনসি) নামে পরিচিত লিবিয়ার পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

খলিফা হাফতার এমন এক সময় এই নাটকীয় ঘোষণা দেন, যখন কিনা লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজি এবং পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য শহর কার্যত আল কায়েদার সহযোগী একটি সংগঠন 'আনসার আল শরিয়া' এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে। তারা লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল জুড়ে তখন সামরিক বাহিনী, পুলিশ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করছে, বোমা হামলা চালাচ্ছে।

খলিফা হাফতার যে পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছিলেন, সেটি কাজে পরিণত করার মতো যথেষ্ট সমর্থন তার ছিল না। তিনি আসলে তখন লিবিয়ায় যে ব্যাপক জন অসন্তোষ সেটিরই প্রতিধ্বনি করার চেষ্টা করছিলেন। বিশেষ করে বেনগাজিতে, যেখানে জেনারেল ন্যাশনাল কাউন্সিলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছিল। কারণ তারা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছিল না।

খলিফা হাফতার নিজের এলাকায় জনপ্রিয় হলেও, লিবিয়ার অন্য অঞ্চলে তার তেমন সমর্থন ছিল না। বরং গাদ্দাফির সঙ্গে যে তার একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং তিনি যে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের লোক, সেটাই লোকে মনে রেখেছিল।

অন্যদিকে, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোও খলিফা হাফতারকে পছন্দ করতো না। কারণ তিনি এদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

অপারেশন ডিগনিটি

২০১৪ সালের মে মাসে খলিফা হাফতার বেনগাজি এবং লিবিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। তার এই অভিযানের নাম দেয়া হয় অপারেশন ডিগনিটি।

২০১৫ সালের মার্চ মাসে লিবিয়ার নির্বাচিত পার্লামেন্ট হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ, যা কিনা জেনারেল ন্যাশনাল কাউন্সিলের জায়গা নিয়েছিল, তারা খলিফা হাফতারকে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অধিনায়ক নিযুক্ত করে।

 

সূত্র: বিবিসি

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৭ মে পর্যন্ত হজ ভিসা আবেদনের সময় বাড়ল Apr 30, 2024
img
আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ২ মে পর্যন্ত স্কুল-মাদরাসার ছুটি বহাল Apr 30, 2024
img
উপজেলা নির্বাচন: দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন আজ Apr 30, 2024
img
তাপমাত্রা ও বৃষ্টি নিয়ে নতুন তথ্য দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর Apr 30, 2024
img
এক সপ্তাহে হিটস্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু, ৮ জনই পুরুষ Apr 30, 2024
img
জি কে শামীমের জামিন ঘিরে আবারও প্রতারণা, আইনজীবীকে আদালতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা Apr 30, 2024
img
সকালে খালি পেটে পানি পানের ৯ সুফল Apr 30, 2024
img
যেসব জেলায় মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে আজ Apr 30, 2024
img
যুক্তরাষ্ট্রে আসামি ধরতে গিয়ে বন্দুক হামলায় ৪ পুলিশ নিহত Apr 30, 2024
img
পেরুতে রাস্তা থেকে ৬৫০ ফুট গভীরে পড়ল বাস, প্রাণ গেল ২৫ জনের Apr 30, 2024