কমলাপুর রেলস্টেশন: টার্মিনালের ভেতরে-বাইরে যাত্রী হয়রানি

পরিবার নিয়ে ট্রেনে করে সিলেট থেকে ঢাকায় এসেছেন আবুল কালাম আজাদ। কমলাপুর রেলস্টেশনে নেমেই হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাকে। তার মতো হাজারো যাত্রী প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ টাইমসকে জানান, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে সিলেট থেকে কালনী ট্রেনে করে ঢাকায় আসেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ট্রেন থেকে নামার আগেই কয়েকজন কুলি তাদের ঘিরে ফেলে। পরে তাদের সাথে থাকা ব্যাগগুলো নিয়ে টানা-হেচঁড়া শুরু করে কুলিরা।

এক পর্যায়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে তর্কেও লিপ্ত হয় একজন কুলি। পরে অনেকটা বাধ্য হয়েই ২০০ টাকার বিনিময়ে কুলিদের দিয়ে ব্যাগ বহন করান তিনি। কিন্তু ছোট ব্যাগটি আবুল কালাম নিজেই বহন করতে পারতেন বলে জানান তিনি।

শুধু টার্মিনাল নয়,কমলাপুর রেলস্টেশন থেকেই বের হয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হয় আবুল কালামকে। পরিবার নিয়ে টার্মিনালের বাইরে বের হওয়া মাত্রই রিকশা ও সিএনজিচালকরা তাকে ঘিরে ফেলেন এবং কোথায় যাবেন সেটা জানার চেষ্টা করেন।

এক পর্যায়ে অনেকটা জোর করেই এক সিএনজিচালক তাকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। এসময় অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে নিয়ে টানাহেচঁড়া শুরু করে অন্যরা। পরে বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে তিনি গন্তব্যে পৌঁছান।

লাবিবা নামের আরেক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। গত শনিবার ট্রেন যোগে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। কমলাপুর রেল স্টেশনে নেমেই কুলি, রিকশা ও সিএনজিচালকদের হয়রানির মুখে পড়েন।

লাবিবার অভিযোগ, ট্রেন থেকে নামার পরই কুলিরা দৌড়ে এসে তার সঙ্গে থাকা লাগেজ নিয়ে টানাটানি শুরু করে। পরে বাধ্য হয়েই কুলিদের দিয়ে লাগেজ বহন করান। টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে বাসে করে গন্তব্যে যেতে চাইলেও সিএনজি অটোরিকশাচালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। পরে বেশি ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশা যোগে যেতে বাধ্য হন তিনি।  

লাবিবা আরও জানান, তিনি ও তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম এলাকায়। চাকরির সুবাদে তারা ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় থাকেন। তারা সব সময় ট্রেনেই যাতায়াত করেন। কিন্তু চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে কোনো সমস্যা না হলেও ট্রেনে ঢাকায় ফেরার পর কমলাপুর রেল স্টেশনে প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের।

আবুল কালাম ও লাবিবার মতো হাজারো যাত্রী প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কমলাপুর রেল স্টেশনে অবস্থান করেন এই প্রতিবেদক। এসময়ের মধ্যে বহু যাত্রীকে হেনস্তা ও হয়রানি হতে দেখেছেন তিনি।

তবে রেল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, যাত্রীদের সুবিধার জন্য স্টেশনে ট্রলি রাখা আছে। ওই ট্রলি দিয়ে যদি যাত্রীরা মালামাল বহন না করতে পারেন; তা হলে কুলিদের সহযোগিতা নিতে পারেন। বিনিময়ে তাদের দিতে হবে নির্ধারিত ২০ টাকা। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের এমন আইন কেউই তোয়াক্কা করছেন না। উল্টো যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি টাকা। এমনকি কারো কারো কাছ থেকে চারশ থেকে পাঁচশ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্টেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে কুলিরা গড়ে তুলেছে একটি সিন্ডিকেট। আর ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিনিয়ত যাত্রীদের হয়রানি করছেন।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে রেল স্টেশনের দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্টেশন কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কমলাপুর রেল স্টেশনের পুলিশ ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা এসআই আব্দুল বাতেন বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। দিন রাত পুলিশ কাজ করছে। তারপরও কোনো যাত্রী ভোগান্তি বা হয়রানির শিকার হলে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মো. আনিসুল হক বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, যাত্রীরা হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো যাত্রী অভিযোগ করেননি। তবে অভিযোগ করলে তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি দেখা হবে।

তিনি বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে রেলের সেবার মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই সঙ্গে রেল স্টেশনে যাত্রীদের বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ হয়রানির শিকার হলে তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা স্টেশন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

 

টাইমস/কেআরএস/জেডটি

Share this news on:

সর্বশেষ