এবার মুক্তাগাছা থেকে ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত গ্রেপ্তার

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা।

শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফেনী পিবিআই’র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার আরেক ঘনিষ্ঠ নুর উদ্দিনকে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের আমতলী এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

নুসরাত হত্যার প্রধান আসামি ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নিজস্ব বলয়ের অন্যতম সদস্য শাহাদাত হোসেন শামীম। সে মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের একজন। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন এই ছাত্রলীগ নেতা।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন নূরউদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম। যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে ‘সিরাজ উদ দৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সদস্য ছিলেন নূরউদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম। তাদের নেতৃত্বে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে ২৮ ও ৩০ মার্চ উপজেলা সদরে দুই দফা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। তারা নুসরাতের পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত শামীমসহ ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম (৪৫), মাদ্রাসার ইংরেজী অধ্যাপক আফচার উদ্দিন (৩৫), আলাউদ্দিন (৩০), কেফায়েত উল্লাহ (৩২) নুসরাতের সহপাঠী ও অভিযুক্ত অধ্যক্ষের ভাগনী উম্মে সুলতানা পপি (১৮), মাদ্রাসা ছাত্র নুর উদ্দিন (১৯), নূর হোসেন (২১) শহীদুল ইসলাম (১৯), জোবায়ের আহমেদ (২১), জাবেদ হোসেন (১৯), আরিফুর ইসলাম (১৯) ও আলাউদ্দিন (২০) ।

এদের মধ্যে ৯ জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে রয়েছেন। কাউন্সিলর মাকসুদ আলমের দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনো পলাতক রয়েছেন শুধু হাফেজ আবদুল কাদের।

এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওইদিনই অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

এরই জের ধরে ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশপরা ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি তখন থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় নুসরাত মারা যান।

নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর ৮ এপ্রিল তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ১০)।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ