সার্ভিস বেনিফিট, ক্ষতিপূরণসহ বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ আজ বুধবার (২ অক্টোবর) তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক বাইপাইলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সোমবার ভোর থেকে নিরবচ্ছিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন রপ্তানি পণ্য, কাঁচামালবাহী ট্রাক কাভার্ড ভ্যান, লরি আটকে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভোগান্তি চরমে উঠেছে সড়ক মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শিল্প পুলিশ আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার বলেছেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। নানা মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আনোয়ারের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোস্তফা আনোয়ারের রাজধানীর ধানমণ্ডির বাসায় গিয়েও তার কোনো হদিস পায়নি।
তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় টানা অবরোধে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও অফিসের কার্যক্রম। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই মহাসড়ক এড়িয়ে চলতে নির্দেশনা দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ।
শ্রমিকরা জানান, গত ২৭ আগস্ট এক নোটিশের মাধ্যমে বার্ডস গ্রুপ লে-অফ ঘোষণা দেওয়া হয়। নোটিশে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কারখানায় কাজ না থাকায় অব্যাহতভাবে আর্থিক লোকসানের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধের কথা জানানো হয়।
ওই নোটিশে গ্রুপটির আরএনআর ফ্যাশন্স লিমিটেড, বার্ডস গার্মেন্ট লিমিটেড, বার্ডস ফেডরেক্স লিমিটেড এবং বার্ডস এঅ্যান্ডজেড লিমিটেডের সব শাখার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে শ্রমিকদের আগস্টের বেতন ১০ সেপ্টেম্বর এবং ৩০ সেপ্টেম্বর সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ পরিশোধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
চুক্তিমতো শ্রমিকদের বেতনের টাকা পরিশোধ করলেও ৩০ সেপ্টেম্বর সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার জন্য রোববার নতুন করে আরও তিন মাস সময় চেয়ে নোটিশ দিলে বিক্ষুব্ধ হন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত চার হাজারের অধিক শ্রমিক। এদের অনেকেই ক্ষতিপূরণ আবার আশায় উত্তরবঙ্গসহ দূর-দূরান্ত থেকে এসে সমবেত হয়েছেন আশুলিয়ায়।
জনভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে সকাল থেকে কয়েক দফা শ্রমিকদের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। তবে শ্রমিকরা পাওনা পরিশোধ না করা পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রাখবেন বলে জানালে চলে যান তারা।
নিজামুদ্দিন নামের একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই আমরা সড়ক ছাড়ব।’
হালিমা আক্তার নামে আরেকজন শ্রমিক বলেন, ‘মালিক কইছে ক্ষতিপূরণ দেবো। আমরা আইসা দেখি মালিকের কোনো খবর নাই। ফ্যাক্টরি বন্ধ কইরা পলাইছে।’
শ্রমিক অধিকারকর্মী ও গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আকতার বলেন, ‘রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ে সড়কে অবস্থান করছে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। বিজিএমই টু শব্দটি করছে না। শ্রমিকদের পাওনা মেরে এভাবে মালিকরা পালিয়ে গেলে তাদের দায় কে নেবে?’
এদিকে শিল্পাঞ্চলে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় তিনটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। ‘কাজ নেই মজুরিও নেই’ ভিত্তিতে এসব কারখানার শ্রমিকরা কোনো বেতন-ভাতা পাবেন না। এ ছাড়া সাধারণ ছুটি ঘোষণায় বন্ধ রয়েছে দুটি তৈরি পোশাক কারখানা।
এদিকে সোমবার দুপুরে জিরাবো এলাকার মণ্ডল গ্রুপের কারখানার সামনে সংঘর্ষে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে এক হাজার ২০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী শিল্প পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রাশেদ মিয়া।
এজাহারে পরস্পর যোগসাজশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, কারখানায় অনধিকার প্রবেশ, মারপিট করে জখম, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীর দায়িত্ব পালনে বাধা, ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধনসহ হুকুমদান ও সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এই মামলায় ইতোমধ্যে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।