প্রবীণদের চোখে পহেলা বৈশাখ

বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে সারা বাংলা প্রস্তুত। এই উৎসবকে ঘিরে কয়েক দশক ধরেই পান্তা-ইলিশ নিয়ে একটা হইচই পড়ে যায়। তবে বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকের আগে এই সংস্কৃতির প্রচলন ছিল না। প্রবীণরা বলছেন, আধুনিককালের কিছু মানুষ পান্তা-ইলিশের রীতি চালু করেছে।

তারা জানান, আগে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হতো খুব অল্প পরিসরে। সেসময়ে পান্তা ইলিশ খাওয়া হতো না। এই সংস্কৃতি চালু হয়েছে ১৯৯০ সালের পর।

ঢাকা শহরে বিভিন্ন প্রান্তের ছয়জন প্রবীণের সাথে কথা বলেছে বাংলাদেশ টাইমস। তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তাদের বৈশাখ উদযাপন কেমন ছিল? সেসময় খাবারের ধরনই বা কেমন ছিল?

এ বিষয়ে উত্তর-পশ্চিম যাত্রাবাড়ীর স্থানীয় এক বাড়িওয়ালী সাবিহা বেগম বলেন, আমার আব্বা ও আম্মা পহেলা বৈশাখে ফলমূল নিয়ে আসতো; তা আমরা খেতাম। পোলাও পাক করতাম। কারো বাড়িতে আমরা ওইদিন যেতাম না। আর পান্তা ইলিশের যে রীতি এখন বের হয়েছে তা আগে ছিল না। এছাড়াও গোস্ত, মুরগি খেতাম। ভালো ভালো খাবার খেতাম। যাতে বছরের সবদিনই ভালো খাবার খেতে পারি। আর তখন এখনকার মতো এতো আয়োজন হতো না।

গেন্ডারিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা এম এ আওয়াল পহেলা বৈশাখের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, এসব বলতে গেলে আমাদের অনেক অতীতে যেতে হয়। তখন পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশের প্রচলন ছিল না। বর্ষবরণের দিন স্বাভাবিক খাবার খাওয়া হতো। তখন অনেক ছিল ইলিশ। আর এখন তো ইলিশের দামও বেশি। অদূর ভবিষ্যতে এই প্রথাও থাকবে কিনা জানি না।

তিনি বলেন, আমাদের সময় পহেলা বৈশাখে বাচ্চাদের নিয়ে মেলায় যেতাম। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন বেড়াতে আসতো।

পুরান ঢাকার নারিন্দার স্থায়ী বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমান বলেন, পহেলা বৈশাখ ছিল ব্যবসায়ীদের হালখাতার উৎসব। সেসময় আমরা আত্মীয়দের নিয়ে পোলাও-কোরমা খেতাম। পান্তা-ইলিশ ছিল না। বর্তমানে পান্তা-ইলিশটাকে ব্যবসায় রুপান্তর করা হয়েছে।

রাজধানীর সায়েদাবাদের মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ করেন সেলিম। তিনি বলেন, আমরা মুসলিম পরিবারের মানুষ। সেসময় আমাদের মেলাতেও যেতে দিতো না। এখনকার ছেলেমেয়েরা যেভাবে ফুর্তি করে তা আমাদের সময়ে ছিল না। এটা এসেছে সম্রাট আকবর থেকে। পান্তা-ইলিশ তো নব্বই এর আগে চোখেও দেখিনি।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতার জন্য মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন।

১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে ‘বঙ্গাব্দ’ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।

আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত।

পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে।

 

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মিথিলা হাতে উঠলো ভারতের ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার May 04, 2024
img
আট দফা কমার পর বাড়লো স্বর্ণের দাম May 04, 2024
img
মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 04, 2024
img
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ আগুন May 04, 2024
img
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার May 04, 2024
img
আইপিএলে প্লে অফে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে যারা May 04, 2024
img
শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা, ৬ ট্রেনের যাত্রা বাতিল May 04, 2024
img
সরকার গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করছে: প্রতিমন্ত্রী May 04, 2024
img
শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বাড়াতে কাজ করছে সরকার : শিক্ষামন্ত্রী May 04, 2024
img
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস May 04, 2024