স্কোরবোর্ডে রানের পাহাড় জমা করেও হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারলো না বাংলাদেশ। প্রথম দু’ম্যাচের মতোই শেষ ওয়ানডের ভাগ্যেও তাই জুটেছে। অভিষিক্ত আমির জাঙ্গুর সেঞ্চুরি ও কেসি কার্টির ৯৫ রানে ভর করে ৪ উইকেট ও ২৪ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এতে করে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
এর মধ্যদিয়ে ১০ বছর পর বাংলাদেশকে ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সর্বশেষ ২০১৪ সালে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন দল ক্যারিবীয়দের কাছে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল। সেই সিরিজও হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে।
সব মিলিয়ে ৩ বছর ৯ মাস পর বাংলাদেশ কোনো ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হলো। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে ৩–০ ব্যবধানে হেরেছিল তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দল।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সেন্ট কিটসে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে সৌম্য ৭৩, মিরাজ ৭৭, মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ৮৪ ও জাকের আলী অপরাজিত ৬২ রানের কল্যাণে ৩২১ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অভিষিক্ত আমির জাঙ্গুর অপরাজিত ১০৪ রান, কেসি কার্টির ৯৫ রানে ও গুদাকেশ মতির অপরাজিত ৪৪ রানে ভর করে ৪ উইকেট ও ২৪ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয়।
বাংলাদেশের দেয়া টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের ২য় ওভারেই ধাক্কা খায় উইন্ডিজ শিবির। নাসুম আহমেদের করা ওভারে ১৪ রান এলেও শেষ বলে রানআউট হন ব্রেন্ডন কিং। নিজের পরের ওভারেই আবারো উইকেটের দেখা পান নাসুম। এবারে বোল্ড করেন অ্যাথানেজকে। স্টাম্প থেকে সরে এসে সুইপ করতে চাইলে তার ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে ফুল লেংথের বল আঘাত হানে স্টাম্পে।
অধিনায়ক শাই হোপও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। হাসান মাহমুদের অফ স্টাম্পের বাইরে বলে হিট করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে সৌম্যর হাতে ক্যাচ দেন। এতে করে ৩১ রানেই ৩ উইকেট হারায় উইন্ডিজ। এরপর এই সিরিজে স্বাগতিকদের ত্রাতা হয়ে উঠা শেরফাইন রাদারফোর্ডকে দ্রুতই প্যাভিলিয়নের পথ দেখান পেসার তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের ১৫তম ওভারে তাসকিন শর্ট ডেলিভারিতে ছক্কা মারার আশায় পুল করলে রাদারফোর্ড ধরা পড়েন তানজিদ হাসান তামিমের হাতে। ক্রিজে আসেন নবাগত আমির জাঙ্গু।
এখান থেকেই মূলত উইন্ডিজের ফিরে আসা। কেসি কার্টিকে সঙ্গে নিয়ে অভিষিক্ত আমির জাঙ্গু দলের হাল ধরেন। এই ফাঁকে বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে তুলে নেন ফিফটি। সুযোগ বুঝে চড়াও হন টাইগার বোলারদের ওপর। ইংল্যান্ড সিরিজেও একটি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন কার্টি। কিন্তু ম্যাজিক ফিগার থেকে ৫ রান দূরে থাকতেই তাকে বিদায় করেন রিশাদ হোসানইন। তার আগে অবশ্য পঞ্চম উইকেট জুটি দু’জনে মিলেন করেন গুরুত্বপূর্ণ ১৩২ রান। কার্টি বিদায়ের আগে ৮৮ বলে ২ ছক্কা ও ১০ চারে খেলেন ৯৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস।
কার্টির বিদায়ের পর শুরুর দিকে কিছুটা ধীরে খেলতে থাকা আমির জাঙ্গুও চড়াও হন টাইগার বোলারদের ওপর। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে এসেই তুলে নেন ফিফটি। সেটাকে অবশ্য পরে টেনেছেন অনেকটা দূর। ৩৪তম ওভারেই ফিরতে পারতেন। রিশাদের করা ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি লাইনে তার সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন পারভেজ ইমন। শেষ পর্যন্ত গুদাকেশ মোতিকে নিয়ে ম্যাচটা শেষ করে আসেন অভিষিক্ত আমির জাঙ্গু।
মোতি নিজেও খেলেন নিখুঁত ব্যাটারের মতো। ৩৫ বলেই ৫০ পার করে তাদের জুটি। জাঙ্গু পান অভিষেক ম্যাচে দারুণ এক সেঞ্চুরি। ৭৯ বল খেলেই স্পর্শ করেছেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ৯০ রানের জুটি গড়েছেন গুদাকেশ মোতির সঙ্গে। মোতি অপরাজিত ছিলেন ৪৪ রানে। ক্যারিবিয়ানরা জয় পায় ৪ উইকেটে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আলজারি জোসেফের দারুণ এক স্পেলে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম এবং লিটন দাস। তানজিদ ৫ বলে ডাক মেরে ফেরেন, আর লিটন আউট হন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। পুরো সিরিজে হতাশাজনক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করা লিটন এদিনও ব্যর্থ; তিন ম্যাচে তার মোট সংগ্রহ মাত্র ৬ রান।
দলের কঠিন সময়ে তৃতীয় উইকেটে হাল ধরেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ এবং সৌম্য সরকার। দু’জন মিলে ১৩৬ রানের চমৎকার একটি জুটি গড়েন। তবে ৭০ রান পেরোনোর পর সেঞ্চুরির সুযোগ হাতছাড়া করেন সৌম্য। গুদাকেশ মোটির বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ৭৩ বলে ৭৩ রান করে ফিরেন তিনি। অন্যদিকে, মিরাজও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি, রান আউট হয়ে ৭৭ রান করে ফেরেন।
পরপর উইকেট হারিয়ে আবার চাপে পড়া দলকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করার মতো সংগ্রহ এনে দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং জাকের আলী। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের ১৫০ রানের রেকর্ড জুটির ওপর ভর করে বাংলাদেশ পায় ৩২১ রানের বড় স্কোর। মাহমুদউল্লাহ ৬৩ বলে ৮৪ রান করেন, যেখানে ছিল ৪টি ছক্কা এবং ৭টি চারের মার। জাকের করেন ৫৭ বলে ৬২ রান।