সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য শেষ ম্যাচ ছিল মান বাঁচানোর লড়াই। ঘরের মাঠে ক্যারিবিয়ানরা সেটা রক্ষা করতে পারল না। শেষ ম্যাচে ৮০ রানের ব্যবধানে উইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।
সেন্ট ভিনসেন্টে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে ৪১ বলে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭২ রান করেন জাকের আলি। জবাবে খেলতে নেমে ১৬ ওভার ৪ বলে ১০৯ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় বলেই ব্রান্ডন কিংকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। সিরিজের সবগুলো ম্যাচেই তাসকিনের শিকার হয়েছেন কিং।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ০.৫ ওভারে খেলার পরই হানা দেয় বৃষ্টি। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মিনিট বিশেক পরই আবার খেলা শুরু হয়। দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। নতুন বলে আরো একবার দুর্দান্ত শুরু করেন শেখ মেহেদি। নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই উইকেটের দেখা পান। এই ডানহাতি অফ স্পিনারকে লং অন দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন জাস্টিন গ্রিভস। তাতে ৭ রান তুলতেই ২ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
এরপর নিকোলাস পুরাণ ও জনসন চার্লস জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে গিয়ে ফেরেন পুরাণ। এই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে বোকা বানিয়েছেন মেহেদি। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে নিচু হয়ে ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন পুরাণ। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১৫ রান।
পাঁচে নেমে ডাক খেয়েছেন রোস্টন চেইস। চার বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই হাসান মাহমুদের বলে মেহেদির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এক প্রান্ত আগলে রাখা চার্লস ফিরেছেন রান আউটের শিকার হয়ে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৮ বলে ২৩ রান। তাতে দলীয় ফিফটির আগেই ৫ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। লোয়ার মিডল অর্ডারে রভম্যান পাওয়েল-গুড়াকেশ মোতিরাও ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। খানিকটা ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল রোমারিও শেফার্ড। তবে তার ২৭ বলে ৩৩ রানের ইনিংস কেবলই জয়ের ব্যবধান কমিয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশের হয়ে লিটনের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নেমে রীতিমতো ঝড় তোলেছিলেন ইমন। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত শুরু পায় বাংলাদেশ। অফফর্মে থাকা লিটনকেও আজ বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। দারুণ কিছু শটও খেলেছেন। তবে ১৪ রানের বেশি করতে পারলেন না। অধিনায়ক ফেরায় ভাঙে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।
লিটন ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ইমন। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এই ওপেনার আলজারি জোসেফকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন জাস্টিন গ্রেভসের হাতে। সাজঘরে ফেরার আগে ২১ বলে ৩৯ রান করেন তিনি। যেখানে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন ইমন। ইমনের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ৫৪ রান তোলে।
তিনে নেমে ভালো শুরুর আভাস দিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তানজিদ তামিম। এক ছক্কায় ৯ বলে ৯ রান করেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার।
৬৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যকফুটে গেলে আরো একবার দলের হাল ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাকের আলি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে শুরুতে দুজনে কিছুটা রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাত খুলেছেন। আর রানের গতি বাড়াতে গিয়েই ফিরেছেন মিরাজ। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৩ বলে ২৯ রান।
এদিন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দেওয়া হয় শামিম হোসেনকে। কিন্তু গত দুই ম্যাচে দারুণ ব্যাট করলেও আজ তার ভাগ্য সহায় হয়নি। ২ রান করে জাকেরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছেন। একই পথে হেটেছেন শেখ মেহেদিও।
দুই ব্যাটারের রান আউটের সঙ্গেই ছিল জাকেরের নাম। তাই বাড়তি দায়িত্ব ছিল তার ওপর। সেটা ভালোভাবেই পুষিয়ে দিয়েছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। শুরুতে কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং করলেও ফিনিশিংটা করেছেন দুর্দান্ত। এক প্রান্তে রীতিমতো টর্নেডো বইয়ে দিয়ে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ৪১ বলে করেছেন অপরাজিত ৭২ রান।
জাকেরকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তানজিম সাকিব। এক চার ও এক ছক্কায় ১২ বলে ১৭ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।