সৌদির দুই তরুণী পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন জর্জিয়ায়

‘আমাদের মুখ ঢেকে রাখতে হতো.... রান্নাবান্না করতে হত, যেন আমরা দাস। আমরা এটা চাই না, আমরা সত্যিকারের একটা জীবন চাই, আমাদের জীবন’- বলছিলেন সৌদি থেকে পালিয়ে যাওয়া ২৫ বছর বয়সী ওয়াফা আল-সুবি।

বিবিসি জানায়, সর্বশেষ সৌদি আরব থেকে নতুন করে দুই বোন পালিয়ে এসেছেন। তাদেরই একজন ওয়াফা।

ওয়াফা এবং তার বড় বোন ২৮ বছরের মাহা আল-সুবি এখন জর্জিয়ায় রাষ্ট্রীয় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন।

টুইটারে জর্জিয়াসিস্টারস একাউন্ট থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন এই দুই সৌদি বোন।

বুধবার তারা নিজেদের মুখ ও পাসপোর্টের ছবি টুইটারে প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে জর্জিয়ায় পৌঁছেছেন।

তারা জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যেন, তাদের তৃতীয় কোনো নিরাপদ দেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়।

সৌদি আরব থেকে তারা প্রথমে জর্জিয়ায় এসেছেন, কারণ এখানে আসতে সৌদিদের ভিসা লাগে না।

ওয়াফা টুইটারে বলেন, ‘আপনাদের সাহায্য দরকার, আমরা নিরাপত্তা চাই, আমরা এমন একটি দেশে যেতে চাই, যারা আমাদের গ্রহণ করবে এবং আমাদের অধিকার রক্ষা করবে।’

তাদের দেখে বোঝা যায় যে, দুজনেই কষ্টে এবং ভয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে তাদেরকে জর্জিয়ার অভিবাসন দপ্তরে নিয়ে যায় কর্মকর্তারা।

স্থানীয় গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই দুই বোন বলেছেন, তারা জর্জিয়াতে নিরাপদ বোধ করছেন না। কারণ এখানে সহজেই তাদের পুরুষ আত্মীয়রা খুঁজে বের করতে পারবেন।

‘জর্জিয়া ছোট একটি দেশ এবং আমাদের পরিবারের যে কেউ এখানে আসতে পারে এবং আমাদের ধরে ফেলতে পারে’-আশংকা প্রকাশ করেছেন ওয়াফা।

কেন তারা সৌদি আরবে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন?

এর জবাবে ওয়াফা বলছেন, ‘কারণ আমরা নারী। আমাদের দেশে আমাদের পরিবার প্রতিদিন আমাদের হুমকি দেয়।’

তার বোন মাহা জানিয়েছেন, এর প্রমাণও তাদের কাছে রয়েছে।

চরম রক্ষণশীল এই রাজতন্ত্রের দেশটি থেকে নারীদের পালিয়ে আসার সর্বশেষ উদাহরণ এই দুই বোন। দেশটিতে এখনো মেয়েদের কাজ করা বা ভ্রমণ করতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হয়।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে আসা ১৮ বছর বয়সী কিশোরী রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনান আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন যখন তিনি ফেরত পাঠানো ঠেকাতে থাইল্যান্ডের একটি হোটেলে নিজেকে আটকে টুইটারে সাহায্য চান। তাকে আশ্রয় দিয়েছে কানাডা।

গত মার্চ মাসে সহিংসতা এবং দমন পীড়ন থেকে বাঁচতে সৌদি দুই বোন পালিয়ে যান এবং হংকংয়ে ছয়মাস লুকিয়ে থাকেন। পরে তারা মানবিক ভিসা পেয়েছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্য প্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক সারাহ লেহ হুইটসন বলছেন, ‘সৌদি আরবে নারীদের জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষরা।’

তিনি বলছেন, ‘জর্জিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার বোনদের অধিকারকে সম্মান জানাবে, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত এবং ভালো ব্যবস্থা। কিন্তু সৌদি আরবের নিয়মকানুনের কারণে নারীরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, সেটার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। সেই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার সৌদি নারীদের অর্থবহ এবং কার্যকরী সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।’

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: