প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক খাতে পদক্ষেপ নিলেও অর্থনৈতিক সংস্কারে সরকারের মনোযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানী ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও বিআইসিসিতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ২০২৪-এর সিম্পোজিয়াম, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট নিয়ে এক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শ্বেতপত্র নিয়ে অনেকে ভুল বুঝে তির্যক মন্তব্য ও ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। সরকারের ভেতর অনেকে শ্বেতপত্রের সুপারিশ ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে অনিশ্চিত বক্তব্য দিয়েছেন। যা আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা চাই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হোক।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সেক্টর বেশি মনোযোগ পেলেও অর্থনৈতিক সংস্কারে কোনো মনোযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো অর্থনৈতিক মেন্যুফেস্ট নেই। অনেকেই বলছেন অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই সরকার আগের সরকারের মতোই কাজ করছে।
সিপিডির সম্মানী ফেলো বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। এটা যে পরিবর্তন হবে তার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইতোমধ্যেই আমরা মধ্যমেয়াদি ফাঁদে আটকা পড়েছি। প্রত্যক্ষ কর না বাড়িয়ে অবিবেচকভাবে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আশঙ্কা করছি জ্বালানি নিয়ে সামনের গরমে কি হবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। সামনের বাজেটের কাঠামোর ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমনের সংগ্রহ অভিযানে দুর্নীতি রয়ে গেছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা এখনো হুমকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার কাজের প্রশংসা করলেও চলমান পদক্ষেপ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে অস্থিরতা চলছে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার যথাযথ মনোযোগ দিচ্ছে না। সরকারের এই মূহুর্তে বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপের বাইরে তেমন কোনো অর্থনৈতিক মেনিফেস্টো নাই। সংশোধিত বাজেট না দেয়ায় এটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন, সংস্কার নিশ্চিত করতে না পারলে সাধারণের পাশাপাশি সংস্কারে জড়িত মানুষরাও ধৈর্যহারা হয়ে পড়বো।
এদিকে আলোচনা সভায় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতির আগুন নিভাতে গিয়ে আমরা ফায়ার সার্ভিস ডাকতে দেরি করেছি। ব্যাংকিং খাতের দুর্দশা বলে শেষ করা যাবে না। বিদেশি ঋণের বোঝা, জাতীয় আয় থেকে বেশি বাড়ায় দায় চেপেছে সাধারণের ওপর। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে প্রয়োজন নীতি, রাজনীতি ও প্রবৃদ্ধির সংমিশ্রণ। আগামী দুই বছরে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হলে সেটাকে ইতিবাচক মনে করি। বিদেশি ঋণের টাকা সরকারের কোষাগারের বদলে কতিপয় সুবিধাবাদীরা বাগিয়ে নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে যাবে। ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে দুই বছরে হলে ভালো হবে বলে মনে করছি। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি করার সুযোগ নেই সামনের অর্থবছরে। মূল্যস্ফীতির আগুন দেশের বাইরে থেকে আসলেও সেটা নিভে গেছে। অন্যদিকে আমাদের নিভেনি।