যুক্তরাষ্ট্রে নবগঠিত ট্রাম্প প্রশাসনকে যেন পাত্তাই দিচ্ছেন না ধনকুবের ইলন মাস্ক। এরইমধ্যে তিনি দেশটির ফেডারেল কর্মকর্তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেছেন। বিশ্বের শীর্ষ এই ধনীর হাতে নজিরবিহীন ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। আর এতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন ফেডারেল কর্মীরা।
ট্রাম্পের রিপাবলিকান শিবিরের নির্বাচনি প্রচারে সবচেয়ে বড় অনুদান এসেছে ইলন মাস্কের পক্ষ থেকে। এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অন্যতম আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি সরকারি কোষাগারে পাওনা আদায় ব্যবস্থার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মাস্ক। এই বিভাগ দেশটির বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের লেনদেন করে থাকে।
দায়িত্ব নিয়েই বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থা ইউএসএআইডি’র কর্ম পরিচালনায় নাক গলানো শুরু করেন মাস্ক। তার প্রতিনিধি দলকে নিযুক্ত করেছেন সংস্থাটির গোপন নথি খতিয়ে দেখার দায়িত্বে। এতে বাধা পেয়ে মাস্ক একাই বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা সংস্থাটিকে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি সংস্থাটির দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে বের করে দেয়ার ক্ষেত্রেও তিনি সহায়তা করেন।
তার এমন একচেটিয়া সিদ্ধান্তে বেশ চটেছেন দেশটির ফেডারেল কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মাস্ক এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সব সময় অনির্বাচিত আমলাদের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু এখন তিনি নিজেই কোনো রকম জবাবদিহি ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন। মাস্ক তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের অপব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
মাস্কের এমন একচেটিয়া প্রভাবের বিষয়টি ওভাল অফিসের নজরে আনা হলে সেটিকে একরকম উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। মাস্কের কর্মকাণ্ডকে একেবারে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করেন তিনি। জানান, তার এবং তার প্রশাসনের অনুমোদন ব্যতীত ইলন মাস্ক কিছুই করতে পারবেন না। এখনও তার অনুমতি ছাড়া মাস্ক কোনো কাজ করছেন না।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যেখানে যথাযথ হবে, সেখানেই আমরা মাস্ককে অনুমোদন দেব। যেখানে যথাযথ হবে না, সেখানে দেব না।’ মাস্ক রিপাবলিক শিবিরের একজন একনিষ্ঠ সদস্য উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি সব কথা আগেই জানিয়েছেন। তার এই মনোভাবকে আমি স্বাগত জানাই।’
অন্যদিকে মাস্কের প্রতিটি বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে ছাড় দিচ্ছে তাতে মাস্কের অসীম ক্ষমতার প্রমাণ পাচ্ছেন নেটিজেনরা। এতে মাস্ক ও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা।
তাদের ভাষ্য, এখনও মাস্ককে ফেডারেল কর্মী বা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়নি। তবে দেশটির সংবাদমাধ্যম মাস্ককে সম্বোধনের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ সরকারি কর্মী’ টাইটেল ব্যবহার করছেন।
সমালোচকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনী প্রচারে ২৫ কোটি ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছিলেন মাস্ক। এর বাইরে মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দেশটির শাসকগোষ্ঠীর বিশাল চুক্তি রয়েছে। তারা জানান, মাস্কের নেতৃত্বাধীন সরকারি বিভাগ- ডি/ও/জি/ই ওয়েবসাইটের প্রতীকটিও পরিবর্তন করে ফেলেছেন তিনি। সেখানে কুকুরের ছবির বদলে যুক্ত হয়েছে সোনালি ডলার। স্বাভাবিক ভাবেই মাস্কের নজর কোনদিকে থাকবে তা অন্য ফেডারেল কর্মীদেরও বোধগম্য হচ্ছে। এমনকি সে বিভাগের বিভিন্ন দায়িত্ব মাস্কের বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা ব্যক্তিদের ওপর অর্পিত করা হয়েছে।
ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, মাস্ককে কেউ নির্বাচিত করেনি। মাস্ক বিতর্ক নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে প্রতিনিধি পরিষদের ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটির ডেমোক্র্যাটরা একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। কংগ্রেস অনুমোদিত তহবিলের ওপর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগের অসাংবিধানিক প্রচেষ্টার জন্যও ডিওজিইর তীব্র সমালোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাটরা।
তাদের ভাষ্য, ‘বিষয়টি একটি বাঘকে পোষা প্রাণীর চিড়িয়াখানায় ঢুকতে দিয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করার মতো। ইলন মাস্কের এই দখলদারির চেষ্টা...টিকবে না।’
টিএ/