এবার ৪ ডিআইজিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

পুলিশের চার ডিআইজিকে এবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অবসরে পাঠানো চারজন হলেন- এন্টি টেররিজম ইউনিট কর্মরত ডিআইজি মো. নিশারুল আরিফ, নৌ পুলিশের কর্মরত ডিআইজি মো. আব্দুল কুদ্দুছ আমিন, হাইওয়ে পুলিশে কর্মরত ডিআইজি মো. আজাদ মিয়া, এনডিসি ও আমেনা বেগম।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন)-এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে এই চারজনকে অবসর প্রদান করা হলো।

তারা বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে জারীকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিতর্কিত নির্বাচনে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা ৬৪ জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্বে ছিলেন, তারাও রয়েছেন এ তালিকায়। এরই মধ্যে যাদের সংযুক্ত করা হয়েছে, তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হতে পারে। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

এরই মধ্যে ৪৫ সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে আরও কয়েক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হতে পারে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিতর্কিত নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা করা হয়েছে। ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে পুলিশ সুপার ছিলেন– ঢাকা জেলায় শাহ মিজান শাফিউর রহমান, গাজীপুরে শামসুন্নাহার, নারায়ণগঞ্জে হারুন অর রশীদ, নরসিংদীতে মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ, মানিকগঞ্জে রিফাত রহমান শামীম, ফরিদপুরে জাকির হোসেন খান, শরীয়তপুরে আব্দুল মোমেন, মাদারীপুরে সুব্রত কুমার হালদার, গোপালগঞ্জে সাইদুর রহমান খান, রাজবাড়ীতে আসমা সিদ্দিকা মিলি, কিশোরগঞ্জে মাশরুকুর রহমান খালেদ, টাঙ্গাইলে সঞ্জিত কুমার রায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনোয়ার হোসেন খান, কুমিল্লায় সৈয়দ নুরুল ইসলাম, চাঁদপুরে জিহাদুল কবির, লক্ষ্মীপুরে আ স ম মাহতাব উদ্দিন, ফেনীতে এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, নোয়াখালীতে ইলিয়াস শরিফ, চট্টগ্রামে নুরে আলম মিনা, কক্সবাজারে এ বি এম মাসুদ হোসেন, বান্দরবানে মোহাম্মদ জাকির হোসেন, রাঙামাটিতে আলমগীর কবির, খাগড়াছড়িতে আহমার উজ্জামান, সিলেটে মো. মনিরুজ্জামান, মৌলভীবাজারে মোহাম্মদ শাহজালাল, হবিগঞ্জে মোহাম্মদ উল্লাহ, ময়মনসিংহে শাহ আবিদ হোসেন, নেত্রকোনায় জয়দেব চৌধুরী, শেরপুরে কাজী আশরাফুল আজীম, জামালপুরে দেলোয়ার হোসেন, পঞ্চগড়ে গিয়াস উদ্দিন আহমদ, লালমনিরহাটে এস এম রাশিদুল হক, গাইবান্ধায় আবদুল মান্নান মিয়া, ঠাকুরগাঁওয়ে মো. মনিরুজ্জামান, কুড়িগ্রামে মেহেদুল করিম, দিনাজপুরে সৈয়দ আবু সায়েম, নীলফামারীতে মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, রংপুরে মিজানুর রহমান, নওগাঁয় ইকবাল হোসেন, জয়পুরহাটে রশীদুল হাসান, বগুড়ায় আলী আশরাফ ভুঁইয়া, রাজশাহীতে মো. শহিদুল্লাহ, নাটোরে সাইফুল্লাহ আল মামুন, পাবনায় শেখ রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জে টুটুল চক্রবর্তী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ টি এম মোজাহিদুল ইসলাম, সাতক্ষীরায় সাজ্জাদুর রহমান, যশোরে মঈনুল হক, বাগেরহাটে পংকজ চন্দ্র রায়, খুলনায় এস এম শফিউল্লাহ, ঝিনাইদহে মো. হাসানুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গায় মাহাবুবুর রহমান, কুষ্টিয়ায় এস এম তানবীর আরাফাত, মেহেরপুরে মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, নড়াইলে জসিম উদ্দিন, মাগুরায় খান মোহাম্মদ রেজওয়ান, বরিশালে সাইফুল ইসলাম, পিরোজপুরে মোহাম্মদ সালাম কবির, ভোলায় মোহাম্মদ মোকতার হোসেন, ঝালকাঠিতে জোবায়দুর রহমান (মারা গেছেন), পটুয়াখালীতে মোহাম্মদ মঈনুল হাসান ও বরগুনায় মারুফ হোসেন।

একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিতর্কিত নির্বাচনে কারা, কী ধরনের ভূমিকায় ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা সবচেয়ে বিতর্কিত কাজে জড়িয়েছেন, তাদের মধ্যে কারও চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি হলে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। কেউ তুলনামূলক কম বিতর্কিত কাজে জড়ালে ওএসডি করা হতে পারে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বিতর্কিত নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বেশ কয়েকজনকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। অনেককে সংযুক্ত করে রাখা হয়।

গত বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে জানানো হয়, ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ৩৩ কর্মকর্তা ওএসডি হলেন। একই কারণে আগে ওএসডি হয়েছেন ১২ কর্মকর্তা। বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা তিন সচিবসহ ২২ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

Share this news on: