মণিপুরে অস্ত্র সমর্পণ করছেন বিদ্রোহীরা

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের গভর্নর অজয় কুমার ভাল্লা’র আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্র জমা দেওয়া শুরু করেছেন বিদ্রোহীদের একাংশ। খবর এনডিটিভি অনলাইনের।

প্রায় ২ বছর ধরে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ-সংঘাত-সহিংসতা চলার পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপরিত শাসন জারি করা হয় মণিপুরে। তারপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি মণিপুরের গভর্নর অজয় কুমার ভাল্লা বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান। এজন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তিনি।

২০ ফেব্রুয়ারি গভর্নরের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভাল্লা বলেন, যারা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অস্ত্র জমা দেবেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না সরকার; আর যারা অস্ত্র সমর্পণ থেকে বিরত থাকবেন, সময়সীমা শেষ হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু হবে।

গভর্নরের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হতে বাকি আছে আর দু’দিন। সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এনডিটিভি অনলাইন জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ১২টি সিএমজি বন্দুক, ২টি পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেল, ২টি এসএলআর রাইফেল, ৪টি এসবিবিএল রাইফেল, পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেলের ২টি ম্যাগজিন, এসএমজি বন্দুকের ১২টি ম্যাগজিন, এসএলআর রাইফেলের ২টি ম্যাগজিন, একটি আইইডি বিস্ফোরক, পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেলের ৩৩ রাউন্ড তাজা গুলি, এসএলআর রাইফেলের ৩২ রাউন্ড তাজা গুলি এবং এসবিবিএল রাইফেলের ৫ রাউন্ড তাজা গুলি, বেশ কয়েকটি বুলেটপ্রুফ ভেস্ট ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম জমা পড়েছে গত ৫ দিনে।

সমর্পণ করা এসব অস্ত্র-গোলাবারুদের ছবি প্রকাশ করেছে মণিপুর রাজ্য প্রশাসন। সামনের দুই দিনে আরও বেশি অস্ত্র জমা পড়বে বলে আশা করছেন কর্মকর্তরা।

মণিপুরের সাধারণ জনতা গভর্নরের এই অস্ত্র সমর্পণের আহ্বানকে দ্ব্যর্থহীন ভাবে সমর্থন করছেন। রাজ্যের মুখ্য সচিব পিকে সিং রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যেসব বিদ্রোহী যোদ্ধা সশস্ত্র রাজনীতি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান, তাদের জন্য সরকারের এই প্রস্তাব একটি ‘সুবর্ণ সুযোগ’।

বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘাতের শুরু ২০২৩ সালের মে মাস থেকে। সে বছর ৪ মে মণিপুরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীকে তফসিলি জাতি হিসেবে ঘোষণা করে মণিপুর হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে রাজ্যটির বৃহত্তম সংখ্যালঘু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জাতিগোষ্ঠী কুকি।

কিন্তু খুবই অল্প সময়ের মধ্যে কুকিদের এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ রূপ নেয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। অশান্ত সেই পরিস্থিতির সুযোগে সক্রিয় হয়ে ওঠে বিদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অধিকাংশই কুকি এবং জো জাতিগোষ্ঠীর।

গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই জাতিগত সংঘাতে মণিপুরে নিহত হয়েছে আড়াই শতাধিক মানুষ এবং বাড়িঘর ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন আরও কয়েক হাজার। এখনও রাজ্যের পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।
সংঘাত শুরুর সময় মণিপুরের রাজ্য সরকারে বিজেপি ক্ষমতাসীন ছিল। গত ৯ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। তারপর ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হয় মণিপুরে।

Share this news on:

সর্বশেষ

৪০ হাজার টাকার সালোয়ার কামিজ পরে পূজায় ক্যাটরিনা Feb 26, 2025
হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় ‘তিন চরিত্র’ আবার একসঙ্গে Feb 26, 2025
প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দিলেই ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার গাড়ি! Feb 26, 2025
img
রুয়েটে আজীবনের জন্য বহিষ্কার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৪ জন Feb 26, 2025
img
৬০২ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিচ্ছে ইসরায়েল Feb 26, 2025
img
এপ্রিলে শুরু হবে ইতা‌লির কর্ম ভিসার নতুন আবেদন প্রক্রিয়া Feb 26, 2025
img
এই সরকারের ব্যর্থতা হলো কাউকে ম্যানেজ না করে চলা : আসিফ মাহমুদ Feb 26, 2025
img
৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে পেছনের নায়ক তারেক রহমান, মূল শক্তি ছাত্রদল: আযম খান Feb 26, 2025
img
'মান্নাত' ছেড়ে নতুন ঠিকানায় শারুখ পরিবার Feb 26, 2025
img
ইব্রাহিমের বিশ্বরেকর্ড, বিশাল সংগ্রহ আফগানিস্তানের Feb 26, 2025