ইরানি নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চান ট্রাম্প

পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে চলা টানাপোড়নের মধ্যে ইরানি নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের চরম বিদ্বেষী নীতির জের ধরে দু’দেশের মধ্যে যখন উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করছে তখন তিনি এ আগ্রহ প্রকাশ করলেন।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইরানের ব্যাপারে যা দেখতে চাই তা হলো তারা (আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য) আমাকে টেলিফোন করছে। আমি চাই ইরানি কর্মকর্তারা একটি ভালো চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আলোচনা করতে আমাকে টেলিফোন করুক। এ ধরনের চুক্তি ইরানকে চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সহযোগিতা করবে।

ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ইরানিদের কাছ থেকে বেশি কিছু চান না; শুধু চান ইরানিরা পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করুক।

তবে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় আস্থা রাখতে পারছে না  তেহরান। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি মাজিদ তাখতে রাভাঞ্চি বলেছেন, আলোচনার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নন এবং তার ওপর আস্থা রাখা যায় না।

বৃহস্পতিবার মার্কিন নিউজ চ্যানেল এনবিসি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাজিদ তাখতে রাভাঞ্চি বলেন, 'আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ব্যাখ্যা দিতে হবে তিনি কেন আলোচনার টেবিল থেকে উঠে গেলেন?'

তিনি বলেন, ট্রাম্প এমন সময় আলোচনার টেবিল থেকে উঠে গিয়েছিলেন যখন বিশ্ব শক্তিগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ওই টেবিলে বসে ছিল।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, 'আবার আলোচনায় বসে তিনি যে এভাবে উঠে যাবেন না তার নিশ্চয়তা কোথায়; বিশেষ করে তিনি যখন একের পর এক আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন।'

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সঞ্চয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও তেহরানের ওপর থাকা অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়ার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ওই পারমাণবিক চুক্তিটি করা হয়। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিটি করেছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য। এই দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া। এর সঙ্গে জার্মানিও ছিল।

গত বছর ওই চুক্তি থেকে বের হয়ে যায় ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে ইরানের ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়। এতে ইরানের অর্থনীতি নতুন করে ধাক্কা খায় এবং ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দেন।

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইরানের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তার প্রশাসনের ইরান নীতি প্রত্যাখ্যান করে জন কেরি ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ‘লোগান আইন’ লঙ্ঘন করছেন এবং এ জন্য তার বিচার হতে পারে।

ট্রাম্প বলেন, ‘জন কেরি (টেলিফোনে) তাদের (ইরানিদের) সঙ্গে অনেক বেশি কথা বলছেন এবং তিনি তাদেরকে বলছেন তারা যেন আমাকে ফোন না করে। এটি লোগান আইনের লঙ্ঘন এবং অকপটে বলতে গেলে এ জন্য তার বিচার হওয়া উচিত।’

জন কেরির একজন মুখপাত্র ট্রাম্পের এ বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিএনএনকে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজ যা কিছু বলেছেন তার সব ভুল এবং কল্পকাহিনি। তিনি বাস্তবতা বুঝতে পারেননি, আইন বোঝেননি এবং সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে আমেরিকাকে কীভাবে নিরাপদ রাখতে হয় সেই কূটনীতি তিনি রপ্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’

 

 

টাইমস/এসআই

 

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আট দফা কমার পর বাড়লো স্বর্ণের দাম May 04, 2024
img
মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 04, 2024
img
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ আগুন May 04, 2024
img
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার May 04, 2024
img
আইপিএলে প্লে অফে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে যারা May 04, 2024
img
শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা, ৬ ট্রেনের যাত্রা বাতিল May 04, 2024
img
সরকার গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করছে: প্রতিমন্ত্রী May 04, 2024
img
শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বাড়াতে কাজ করছে সরকার : শিক্ষামন্ত্রী May 04, 2024
img
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস May 04, 2024
img
যাত্রা শুরু করলো কমিউনিকেশান এসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ May 04, 2024