২০০২ সালে গুজরাটে সংঘটিত হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন, আহত হন আড়াই হাজারের বেশি, এবং তিনশোরও বেশি মানুষ নিখোঁজ হন। সে সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, মোদি সেই দাঙ্গা উসকে দিয়েছিলেন এবং প্রশাসনকে তা বন্ধ না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
দাঙ্গার সূত্রপাত হয় সবরমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায়, যেখানে ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হন। এর পরপরই গুজরাটজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যা তিনদিন ধরে বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম হামলায় রূপ নেয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও পডকাস্ট হোস্ট লেক্স ফ্রিডম্যানকে আজ রোববার (১৬ মার্চ) দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদি ওই দাঙ্গায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি আরও দাবি করেন, ২০০২ সালের দাঙ্গাকে সবচেয়ে বড় দাঙ্গা হিসেবে অভিহিত করা হলেও; এরআগে ওই সময় সেখানে আরও ২৫০টি দাঙ্গা হয়েছিল। ২০০২ সালের দাঙ্গা নিয়ে ভুল ধারণা আছে বলেও দাবি করেন মোদি।
তিনি বলেন, “ভুজের ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং ওই স্থানটি পুনর্গঠনের জন্য আমাকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শপথের দিন থেকে আমি আমি নিজেকে এতে নিমগ্ন করি। আমি এমন মানুষ ছিলাম যার এরআগে সরকার পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আমি কখনো কোনো প্রশাসনের অংশ ছিলাম না। এমনকি সরকারে কখনো কাজও করিনি। সেবার আমার জীবনে প্রথম নির্বাচন করি। ২০০২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আমি রাজ্য প্রতিনিধি হই, একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমি খুব সম্ভবত ২৪-২৫ বা ২৬ ফেব্রুয়ারি গুজরাট অ্যাসেম্বলিতে প্রবেশ করি। ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমরা বাজেট নিয়ে কথা বলছিলাম। আমি নির্বাচিত হওয়ার তিনদিন পর সেই ট্রেনে আগুন দেওয়ার ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি ছিল অকল্পনীয় বড় ট্রাজেডি। মানুষকে জীবিত পোড়ানো হয়েছিল। ওই সময় বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ঠিক তখন এত মানুষকে জীবিত পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। আপনি কল্পনা করতে পারবেন পরিস্থিতি কতটা উত্তপ্ত ছিল। অবশ্যই এটি সবার জন্য একটি ট্র্যাজেডি ছিল। সবাই শান্তি চায়।”
২০০২ সালের সেই ভয়াবহ নৃসংশ মুসলিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার ও তার দলের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না এমন দাবি করে মোদি বলেন, “আমি ক্ষমতায় আসার আগেই এটির লম্বা ইতিহাস ছিল। কিন্তু ২০০২ সালের সেই একটি ঘটনা জ্বলে ওঠার মুহূর্ত ছিল। যা কিছু মানুষকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যায়। পরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়। ওই সময় আমাদের বিরোধী রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় ছিল। এবং প্রাকৃতিকভাবে তারা সব অভিযোগ আমাদের দিকে দিতে চেয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও, বিচার বিভাগ খুব সূক্ষ্মভাবে সবকিছু তদন্ত করে। এবং পরিশেষে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি। যারা সত্যি দায়ী ছিল তারা আদালতের বিচারের মুখোমুখি হয়েছে।”
মোদি আরও বলেন, “২০০২ সালের দাঙ্গা সবচেয়ে বড় দাঙ্গা ছিল— এটিই একটি ভুল তথ্য।” এর আগে ছোটখাট বিষয় নিয়ে ২৫০টিরও বেশি দাঙ্গা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ‘গুজরাটের কসাই’ হিসেবে কুখ্যাত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এরপর আর সেখানে কোনো দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য ২০০১ সালে মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন। তিনি সাধারণ মানুষের ভোটে মুখ্যমন্ত্রী না হয়ে দলীয় প্রধান হিসেবে এই দায়িত্ব পান। ওই সময় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কেশভাই প্যাটেল অসুস্থ হলে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়। এর এক বছর পরই সেখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলে।
এসএস/টিএ