যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিদের বেশ কয়েক জন নেতা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস। রোববার (১৬ মার্চ) হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলের ওপর তাদের হামলায় ইরানের সমর্থন বন্ধ করতে তেহরানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ বলেছেন, শনিবার হামলা মূলত হুথির বেশ কয়েকজন নেতাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।
‘‘আমরা কেবল অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়ে তাদের আঘাত করেছি এবং ইরানকে বলেছি, যথেষ্ঠ হয়েছে,’’ ফক্স নিউজকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে বাধা দেওয়ার জন্য ‘‘সব ধরনের বিকল্প টেবিলে রয়েছে’’ বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
রোববার হুথি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর শনিবার ইয়েমেনে চালানো যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হামলায় ৩১ জন নিহত ও ১০১ জন আহত হয়েছেন।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনের বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে তেহরান-সমর্থিত হুথিরা। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গোষ্ঠী বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রতিবাদে লোহিত সাগরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট জাহাজ এবং ট্যাংকারে হামলা অব্যাহত থাকবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পরপরই গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধের পর থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে চলাচলকারী ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা।
পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য ১৭৪ বার এবং বাণিজ্যিক জাহাজে ১৪৫ বার হামলা করেছে হুথি বিদ্রোহীরা। মালামাল পরিবহনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথ দিয়ে বিশ্বের প্রায় ১২ শতাংশ জাহাজ চলাচল করে। হুথিদের হামলার ফলে সেখানে জাহাজ চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটেছে।
শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোসালে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে হুথি নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘হুথিদের হামলা অবশ্যই আজ থেকেই বন্ধ করতে হবে। যদি তারা তা না করে, তাহলে তাদের ওপর নরক বৃষ্টি নামবে; যা আগে কখনও দেখা যায়নি!’’
এর আগে, গত মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে পারমাণবিক আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই চিঠিতে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, কোনও চুক্তি না হলে বিষয়টি ‘‘সামরিকভাবে’’ মোকাবিলা করা হতে পারে। ওয়াশিংটনের এই হুমকি উড়িয়ে তেহরান বলেছে, কোনও ধরনের হুমকির মুখে তারা আলোচনায় বসবে না।
এবিসি নিউজকে মাইকেল ওয়াল্টজ বলেছেন, ‘‘ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া হবে না। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র পাওয়া ঠেকানো নিশ্চিত করতে সমস্ত বিকল্প উপায় আমাদের টেবিলে রয়েছে।’’
সূত্র: এএফপি
আরএইচ