‘বহিরাগত’ অভিনেত্রির কাছে হেরে গেলেন নেপোকিডরা

হিন্দি সিনেমার ব্যবসা সফল নায়িকাদের কথা উঠলে দীপিকা পাড়ুকোন বা আলিয়া ভাটের নাম আসে। গত বছরের ‘স্ত্রী ২’ সিনেমার সাফল্য মনে রাখলে শ্রদ্ধা কাপুরের নামও আপনি বলতে পারেন। তবে জানেন কি, গত দুই বছরে এক ‘বহিরাগত’ অভিনেত্রীর কাছে হেরে গেছেন দীপিকা, আলিয়া বা শ্রদ্ধারা। বহিরাগত বলতে তিনি হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কেউ নন, দক্ষিণি অভিনেত্রী। আবার তিনি সিনেমা পরিবারও কেউ নন, এসেছেন সাধারণ এক পরিবার থেকে।

কে এই অভিনেত্রী? জেনে নেওয়া যাক হিন্দুস্তান টাইমস অবলম্বনে।

তিনি আর কেউ নন...

গত দুই বছরে এই অভিনেত্রীর মুক্তি পাওয়া ৩টি সিনেমা বিশ্বজুড়ে ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি ব্যবসা করেছে, ভারতের বক্স অফিস থেকে আয় করেছে ১ হাজার ৮৫০ কোটি রুপি। ২৮ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী আর কেউ নন রাশমিকা মান্দানা। টানা তিন বছর তিনটি ব্লকবাস্টার সিনেমার অংশ হওয়া সহজ নয়, তবে এই কঠিন কাজটিই করে দেখিয়েছেন তিনি। প্রতিশোধের গল্প থেকে ঐতিহাসিক সিনেমায় নিজের সার্থকতা প্রমাণ করেছেন। তাই ‘অ্যানিমেল’, ‘পুষ্পা ২’ থেকে ‘ছাবা’—তাঁর তিনটি সিনেমাই সুপারহিট। ১৬ মাসের ব্যবধানে রাশমিকার তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সবশেষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এসেছে লক্ষ্মণ উতেকরের ‘ছাবা’। এ সিনেমা বিশ্বব্যাপী ৭০০ কোটি রুপি ব্যবসা করেছে।

তিন সিনেমা মিলিয়ে তাঁর নামের পাশে এখন ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি আয়! মনে করা হচ্ছে ‘ছাবা’ দ্রুতই ‘পুষ্পা ২’ ও ‘অ্যানিমেল’-এর হিন্দি বক্স অফিসের রেকর্ড ভেঙে দেবে। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এখন বলিউডে কাজ করেন না, হিন্দি সিনেমার বক্স অফিসে তাই সাধারণত রাজত্ব করেন দীপিকা পাড়ুকোন বা আলিয়া ভাটরা। ক্যাটরিনা কাইফ বা কঙ্গনা রনৌতরা বক্স অফিসের দৌড় থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। গত কয়েক বছরে শ্রদ্ধা কাপুর বা কৃতি শ্যাননের মতো অভিনেত্রীরা উঠে এসেছেন।

২০২৩ সাল থেকে দীপিকার ৫ সিনেমা বক্স অফিসে ১ হাজার ৮০০ কোটি রুপির ব্যবসা দিয়েছে, একই সময়ে আলিয়া অভিনীত সিনেমা ব্যবসা করেছে মাত্র ৩০০ কোটি রুপি।

কেন রাশমিকা?

কর্ণাটকের মেয়ে রাশমিকা, ২০১৬ সালে বড় পর্দায় অভিষেকও হয় কন্নড় সিনেমা দিয়ে, এরপর করেন তেলেগু সিনেমা। সব কটিই কমবেশি ব্যবসা করেছে। তবে আলাদাভাবে রাশমিকাকে মনে রাখার কারণ ছিল না। রাশমিকার ক্যারিয়ার নতুন গতি পায় ২০১৮ সালে তেলেগু সিনেমা ‘গীতা গোবিন্দম’ দিয়ে। অল্প বাজেটে নির্মিত এই রোমান্টিক কমেডি সিনেমাটি সুপারহিট হয়। সঙ্গে শুরু হয় বিজয় দেবরাকোন্ডার সঙ্গে জুটিও। ছবিটি তরুণ দর্শকেরা ব্যাপক পছন্দ করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবির নানা দৃশ্য ও সংলাপ নিয়ে তৈরি হয় মিম। অন্তর্জালে তাঁকে নিয়ে চর্চা বাড়তে থাকে।

সব শুনে দীপিকার মুম্বইয়ের বাড়িতে ছুটে আসেন তাঁর বাবা-মা। অভিনেত্রীর মা কন্যাকে পরামর্শ দেন মনোবিদের কাছে যাওয়ার। সেই মতোই মনোবিদের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অভিনেত্রী।মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একাধিক বার খোলাখুলি কথা বলেছেন দীপিকা পাড়ুকোন। এক সময়ে আত্মহত্যার কথাও মাথায় এসেছে বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী। অগত্যা মনোবিদের সাহায্য নিতে হয়েছিল তাঁকে। তবে মনোবিদের কাছে যাওয়ার সময়ে গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়েছিল তাঁকে। এই বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি কথা বলেছিলেন অভিনেত্রী।২০১৪ সালে সময়টা ভালই যাচ্ছিল দীপিকার।

 কাজের জগতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ এক দিন সকালে ভেঙে পড়েন। অভিনেত্রী বলেন, “কেরিয়ারের মধ্যগগনে ছিলাম। সব ভালই চলছিল।” সেই সময়ে প্রায়ই ক্লান্ত লাগত দীপিকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও কাজ করে চলেছিলেন তিনি। এই সব কিছুর মধ্যেই ক্রমশ বুঝতে পারেন, সমস্যাটা অন্য কোথাও।

এক দিন সকালে শারীরিক অস্বস্তি শুরু হয় তাঁর। অভিনেত্রীর কথায়, “বহু পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে বুঝলাম, কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। পেটের মধ্যে এক অদ্ভুত অস্বস্তি হত। অনবরত কাঁদতাম। ভেঙে পড়তাম। নিজেকেই যেন আর চিনতে পারছিলাম না।”এই সব শুনে দীপিকার মুম্বইয়ের বাড়িতে ছুটে আসেন তাঁর বাবা-মা। অভিনেত্রীর মা কন্যাকে পরামর্শ দেন মনোবিদের কাছে যাওয়ার। সেই মতোই মনোবিদের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অভিনেত্রী। মনোবিদের কাছে গিয়ে জানতে পারেন, আতঙ্ক ও অবসাদ তাঁর উপর জাঁকিয়ে বসেছে। পরে এই বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছেন দীপিকা। কিন্তু সেই সময়ে লুকিয়ে লুকিয়ে মনোবিদের কাছে যেতেন তিনি।রাস্তায় বেরোলেই ছবিশিকারিরা পিছু নিতেন। কিন্তু দীপিকা চাইতেন না, তাঁর গন্তব্য সম্পর্কে তাঁরা জানুন। কিন্তু একটা সময় পরে তিনি নিজেই উপলব্ধি করেন, অন্য অসুস্থতার মতোই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও কথা বলা উচিত। লুকিয়ে রাখার মতো বিষয় নয়। তার পর থেকেই প্রকাশ্যে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন তিনি।

আরএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ