বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) জানিয়েছে, ২০২৪ সাল ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনই এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ।
গত ১২ মাসের বিশ্লেষণও আশাব্যঞ্জক নয়। ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের তুলনায় গত এক বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.৭৮ ফারেনহাইট) বেশি ছিল। এর আগে এত ব্যাপক হারে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দেখা যায়নি।
বর্তমান তাপমাত্রা ২০২৩ সালের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে, যা জলবায়ু সংকটের আরও গুরুতর অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুসারে, সরকারগুলো বিশ্বের উষ্ণায়নকে শিল্পযুগের আগের পর্যায়ের তুলনায় দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখার অঙ্গীকার করেছিল। একইসঙ্গে তারা উষ্ণায়নের মাত্রাকে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির নিচে রাখতে চেষ্টা চালাবে বলেও জানিয়েছিল।
উষ্ণায়নের গড় তাপমাত্রা দশক ধরে মাপা হয়। ডব্লিউএমও বার্ষিক রিপোর্টে প্যারিসের লক্ষ্যমাত্রা না ছাড়ালেও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদী উষ্ণায়ন এক দশমিক ৩৪ থেকে এক দশমিক ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে।
জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি কার্বন ডাই অক্সাইড আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়াচ্ছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। তাদের মতে কার্বন ডাই অক্সাইড বিগত ২০ লাখ বছরের তুলনায় বেশি জমা হচ্ছে।
ডব্লিউএমও’র প্রধান সেলেস্টে সাউলোর মতে, এই নতুন তথ্য আমাদের জীবন, অর্থনীতি এবং সর্বোপরি পৃথিবীর জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের। ডব্লিউএমও’র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের তাপমাত্রার পরিবর্তনের পেছনে শৈত্যপ্রবাহ লা নিনা থেকে উষ্ণপ্রবাহ এল নিনোতে পরিবর্তনই দায়ী। যদিও গবেষকদের মতে, হাওয়ার উষ্ণতা বৃদ্ধি আসলে একটা বড় পরিবর্তনের অংশ মাত্র।
এই উষ্ণায়নের প্রভাব পড়ছে সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমে। এর ফলে সমুদ্রের জীববৈচিত্র হ্রাস পাচ্ছে। সমুদ্রের কার্বন শোষণের ক্ষমতা কমছে। একই ভাবে তাপমাত্রা বাড়ার জন্য সামুদ্রিক ঝড় তৈরি হচ্ছে। পানিতে অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছেদের ক্ষতি হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে মৎস্যজীবীদের ওপর।
উপরন্তু, সমুদ্র-স্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে উপকূলবর্তী অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩০ শতাংশ সৌর ও বায়ু শক্তির সাহায্যে তৈরি হয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কথা বললেও সে দেশে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, সৌরশক্তি দিয়ে দেশের সাত শতাংশ বিদ্যুৎ প্রয়োজন মিটতে পারে।
পরিবেশ বান্ধব শক্তি ব্যবহারের ব্যয় বিগত কয়েক বছরে অনেক কমেছে। তা সত্ত্বেও চিন্তিত বিশ্বের বৈজ্ঞানিকরা।
ডব্লিউএমও’র রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে যুক্তরাজ্যের জাতীয় আবহাওয়া ও জলবায়ু দপ্তরের প্রধান বিজ্ঞানী স্টিফেন বেলচার জানিয়েছেন, পৃথিবীর শরীর ভালো নেই। তিনি আরও জানান, এই পরিস্থিতিতেই সাবধান না হলে বন্যা বা খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভবনা ক্রমশই বাড়বে।
এসএস/টিএ