ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর নির্মিত হয় শতাধিক নাটক। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এরই মধ্যে অনেক নাটকের কাজ শেষ হয়েছে, কিছু নাটকের শুটিং শেষ পর্যায়ে, আবার কিছু রয়েছে সম্পাদনার টেবিলে। কিন্তু এসব নাটকের মুক্তি নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। সঠিক সময়ে মুক্তি দিতে পারবেন কিনা এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।
এর কারণ, যে বাজেটে নাটক নির্মাণ করা হয়েছে, শুধু ইউটিউব থেকে সে বাজেট তোলা সম্ভব নয়। এজন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্পন্সরনির্ভর হতে হচ্ছে এবং এ নির্ভরতার কারণে দীর্ঘিদন ধরেই স্পন্সর সংকটে ভুগছে প্রযোজনা সংস্থাগুলো।
নাটক নিয়ে কেন স্পন্সরনির্ভর হতে হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকরা শিল্পীদের আকাশচুম্বী পারিশ্রমিকের বিষয়টিই সামনে নিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, ‘প্রথমসারির অভিনয় শিল্পীদের পারিশ্রমিক এতটাই বেশি, যা আমাদের জন্য চাপ হয়ে যায়। এর মধ্যেই কেউ কেউ তাদের পারিশ্রমিক আগের তুলনায় আরও বাড়াচ্ছেন। এখন যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলা করতে হলে শিল্পীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা সহযোগিতা করলে আমাদের স্পন্সরের পেছনে ছুটতে হবে না। সঠিক সময়েই আমরা নাটক মুক্তি দিতে পারব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্পন্সর সংকটে গত বছরের ঈদুল আজহার ২০টির মতো বড় বাজেটের নাটক আটকে গেছে। এদিকে গত ভালোবাসা দিবসের জন্য নির্মিত নাটকগুলোর মধ্যে এবার ৮০ শতাংশ নাটক একই কারণে মুক্তি পায়নি। যা এ ঈদে মুক্তি পাবে বলে জানা যায়। এর মধ্যে ঈদের জন্যও নাটক নির্মিত হয়েছে। তাহলে ঈদে আসলে কোন নাটকগুলো আসবে? প্রযোজকরাও এখন নিশ্চিত নন, ঈদে কোন নাটকগুলো তারা মুক্তি দেবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরিচালক বলেন, ‘ঈদে প্রায় শতাধিক নাটক আটকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন তারকারা যদি পারিশ্রমিক কমান তাহলে এমনিতেই অন্যান্য খরচও কমানো যাবে। তাহলে স্পন্সর ছাড়াই নাটক মুক্তি দিয়ে টাকা উঠানো সম্ভব।’
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভিও স্পন্সর জটিলতায় গত ভালোবাসা দিবসের জন্য নির্মিত ছয়টি নাটক মুক্তি দিতে পারেনি। চ্যানেলটির কর্ণধার শাহেদ আলী বলেন, ‘তারকা শিল্পীদের পারিশ্রমিক কমানোর পাশাপাশি সঠিক সময়ে শুটিং শুরু করা গেলে এ সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। তারকারা যদি সঠিক সময়ে সেটে আসেন ও সঠিক সময়ই শুটিং শুরু করা যায়, তাহলে শুটিং খরচ এমনিতেই কমে যাবে। তাতে নাটকপ্রতি দুই থেকে তিন লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। তাহলে আমাদের স্পন্সরনির্ভরতা কমবে। নাটক মুক্তিতেও আর জট তৈরি হবে না। এখন ঈদেও যদি স্পন্সর পাওয়া না যায়, তাহলেও শতাধিক নাটক আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে নাটকের প্রযোজক ও পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে নাটকে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেন জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। তিনি প্রতি নাটকে সর্বনিম্ন পারিশ্রমিক নেন চার লাখ টাকা। যা দুবছর আগেও তিনি ২/৩ লাখ টাকা করে নিতেন নাটকপ্রতি।
এদিকে এ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন জনপ্রিয় তিন অভিনেতা মোশাররফ করিম, নিলয় আলমগীর, মুশফিক আর ফারহান। যারা নাটকপ্রতি ৩ লাখ টাকা করে নিয়ে থাকেন। এছাড়া আড়াই লাখ করে নিয়ে থাকেন তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভানদের মতো তারকারা।
অভিনেত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেন মেহজাবীন চৌধুরী। একেকটি নাটকের জন্য দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন তিনি। তবে বর্তমানে তিনি নাটকে খুব কম অভিনয় করছেন। এ ঈদেও তার অভিনীত ‘বেস্ট ফ্রেন্ড ২.০’ নামে একটি নাটক প্রচার হওয়ার কথা রয়েছে। যেটি গত ভালোবাসা দিবসেই মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও, স্পন্সর সংকটে মুক্তি পায়নি।
এদিকে ব্যস্ত অভিনেত্রীদের একজন তাসনিয়া ফারিণ। তিনিও নাটকপ্রতি লাখ টাকার ওপরে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। তবে পেইড ভার্সন ওটিটি কনটেন্টের জন্য পারিশ্রমিক আরও বাড়িয়ে দেন তিনি। এ তালিকায় আরও রয়েছেন তানজিন তিশা, সাফা কবির, সাবিলা নূরসহ একাধিক অভিনেত্রী।
অন্যদিকে তানজিম সাইয়ারা তটিনী ও কেয়া পায়েল, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, সাদিয়া আয়মান, সামিরা খান মাহিসহ অনেক অভিনেত্রী রয়েছে যারা এখনো নাটকপ্রতি ৬০-৭০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন বলে জানান নির্মাতা ও প্রযোজক।
প্রযোজনা সূত্রে জানা যায়, এসব শিল্পীর অভিনীত প্রায় ২০টির বেশি নাটক স্পন্সর জটিলতায় আটকে আছে। যা গত ভালোবাসা দিবসে মুক্তির জন্য নির্মিত হয়েছিল। সেগুলো এবার ঈদে মুক্তির কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ঈদের নাটক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই এখন শিল্পীদের পারিশ্রমিক কমালেও তা খুব একটা লাভবান হবে না প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তাই তারা অপেক্ষায় রয়েছেন স্পন্সরের। তবে সঠিক সময়ে স্পন্সর না পাওয়া গেলে, ঈদের নাটকের মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাবে।
আরএইচ/এসএন