স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লড়াই যেদিন শুরু হয়েছিল, সেই স্মৃতিময় দিন ২৬ মার্চ। এই দিন জাতির জন্য গৌরবময় ও জাতীয় দিবস।এই মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
বাণীতে তিনি বলেন, ‘আজ ২৬ মার্চ (২০২৫) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। আমাদের জাতীয় জীবনে এই দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। ১৯৭১ সালের এই দিনে এ দেশের মুক্তিকামী আপামর জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের চূড়ান্ত বিজয় এবং বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
এ কারণেই '২৬ শে মার্চ' আমাদের জাতীয় জীবনে গৌরব ও অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে। স্বাধীনতা দিবসের এই শুভলগ্নে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন।’
‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেসব অকুতোভয় বীর শহীদকে, যাদের সুমহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। আমি আরও স্মরণ করছি, সেনাবাহিনীর সব শহিদকে, যারা শুধু স্বাধীনতাযুদ্ধেই নয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও দেশের স্বার্থে দেশে এবং বিদেশে দায়িত্বরত অবস্থায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সব শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
‘বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের গর্ব ও আস্থার প্রতীক। দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার নিমিত্তে সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মতো সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন, ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আর্তমানবতার সেবা প্রদান এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তিরক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে অনন্য ভূমিকা রেখে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।’
‘স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত বাহিনীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেশমাতৃকার প্রয়োজনে যেকোনো অর্পিত দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও সমর সক্ষমতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পিতভাবে এবং পর্যায়ক্রমে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সংযোজন এবং উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী এখন সুপ্রশিক্ষিত, দক্ষ এবং সদা প্রস্তুত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য আগামী দিনগুলোতে পেশাদারত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশ এবং দেশের মানুষের সেবায় নিবেদিতভাবে কাজ করে যাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
পরিশেষে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও সাফল্য কামনা করছি। মহান 'স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫' এর এই শুভলগ্নে দেশের আপামর মানুষের সুস্থ জীবন এবং সমৃদ্ধি কামনা করছি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের সহায় হোন। আমিন।’
এমআর