ভূমধ্যসাগরের দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় বিলালকে

অবৈধপথে ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে ৩৯ জন নিখোঁজ হওয়ার পর ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া যুবকরা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

বেঁচে ফিরলেও তাদের তাড়া করছে দুঃসহ স্মৃতি। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বলছেন, মৃত্যুপথ পাড়ি দিতে আরো অন্তত দুইশ বাংলাদেশিকে জড়ো করা হয়েছে লিবিয়ায়।

জীবন বদলের স্বপ্নে বিভোর হয়ে অবৈধ পথে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জের বিলাল আহমেদ। শুধু একাই নন, ভাগ্নে আহমদ ও দুই ভাতিজা লিটন ও আজিজও সঙ্গী ছিলেন তার। এরকম প্রায় ৮৫ জনকে নিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায় তাদের নৌকা।

সলিল সমাধি হয় আহমদ, লিটন ও আজিজসহ অন্তত ৩৯ জনের। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বিলাল।

নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরলেও তাকে তাড়া করে ফিরছে দুঃসহ স্মৃতি।

দালালচক্র ভারত, শ্রীলংকা, কাতার হয়ে তাদের নিয়ে যায় লিবিয়ায়। লিবিয়ায় কার্যত জিম্মি করে কয়েকমাস চলে নানান উপায়ে নির্যাতন।

পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেরার পথও। অবশেষে প্রতি পরিবারের কাছ থেকে ৮ লাখ করে টাকা আদায় করে ইতালির উদ্দেশে তাদের তোলে দেওয়া হয় রাবারের নৌকায়। অল্পদূরে গিয়েই ডুবে যায় তাদের নৌকা।

এমন ঘটনা এটিই শেষ নয়। বেঁচে ফেরা বিলালের দাবি, লিবিয়ায় আরো অন্তত দুইশ বাংলাদেশি তরুণকে এই পথে ইতালি পাঠাতে জড়ো করে রেখেছে পাচারকারী চক্র।

এক গ্রামেরই তিন তরুণ নেই। বিলাল ফিরে এলেও তাই এলাকাজুড়ে বিষাদ। পাচারকারী চক্রকে নির্মূলে প্রশাসনিক উদ্যোগ চান এলাকাবাসী।

একই সাথে জীবন বদলের লোভে কেউ যেন দালালদের প্রতারণায় না পড়েন এই আহ্বানও তাদের।

 

প্রসঙ্গত, গত ৯ মে লিবিয়ার উপকূল থেকে একটি বড় নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন ৭৫ অভিবাসী। যার মধ্যে ৫১ জন ছিলেন বাংলাদেশি।

গভীর সাগরে তাদের বড় নৌকা থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি নৌকায় তোলা হলে কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি ডুবে যায়। এতে ৬৫ জন প্রাণ হারান।

ডুবে যাওয়াদের মধ্যে ১৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১৪ জনই ছিলেন বাংলাদেশি। পরে সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ৩৯ বাংলাদেশির একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়।

এরপর বেঁচে যাওয়া ১৫ বাংলাদেশি ২১ মে এবং দুদিন পর ২৪ মে আরো তিন বাংলাদেশি দেশে ফিরেন।

 

টাইমস/জেডটি

Share this news on: