বিশ্ব মানবতার পক্ষে বাংলাদেশের এক নতুন ইতিহাস রচনা

ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’-এর ডাকা ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে লাখো মানুষের উপস্থিতি যেন ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ব মানবতার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারি, ইসলামিক আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ চৌধুরী এ্যানি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ আরও অনেকে।

সমাবেশে বক্তারা ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি থেকে ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করার দাবি জানান। তাঁরা বলেন, এটি যুদ্ধ নয়, এটি গণহত্যা — তাই তা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক নারী-পুরুষ পর্যন্ত কেউই বাদ যাননি।

সমাবেশস্থলে দেখা যায়, আহত ফিলিস্তিনির সাজে একদল শিশু—কেউ মাথায় ব্যান্ডেজ, কেউবা হাতে ছোট কফিনে মোড়ানো ‘শিশু লাশ’ নিয়ে এসেছে। এসব দেখে মনে হচ্ছিল ঢাকার বুকে যেন একখণ্ড ফিলিস্তিন নেমে এসেছে।

অনুষ্ঠান শেষে মোনাজাতে গাজাবাসীর জন্য মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন জনতা। মোনাজাতে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার, আহতদের সুস্থতা, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হওয়া এবং নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান আগ্রাসনের ন্যায়বিচারের জন্য দোয়া করা হয়।

কর্মসূচিতে বিশ্বের সরকারসমূহ এবং ওআইসির মতো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর কাছে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানানো হয়—
১. ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব ধরনের সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে।
২. জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
৩. গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে।
৫. জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়—
“গাজার রক্ত প্রবাহে আমরা লজ্জিত হওয়ার আগেই, গাজার পাশে দাঁড়ানোই উম্মাহর জন্য সম্মানের একমাত্র পথ। আর যে নেতৃত্ব আজ নীরব, কাল ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে তারা।”

এসএম/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বরিশালে হাফ ভাড়া নিয়ে শ্রমিক-শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ, আহত অন্তত ২০ Nov 15, 2025
img
বিশ্ববাজারে ফের কমল স্বর্ণের দাম Nov 15, 2025
img
মসজিদে যাওয়া নিয়ে উত্তেজিত সোনাক্ষী, মন্তব্য জহিরের Nov 15, 2025
img

বিবিসি বাংলা

আলোচনায় ‘রাতের ডিসি’, কোন যোগ্যতায় নিয়োগ পাচ্ছেন! Nov 15, 2025
img
বরিশালে বাসভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বে শ্রমিক-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, ভাঙচুর অন্তত ১০টি বাস Nov 15, 2025
img
পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া অধিকার, ভারতের কোনো দয়া নয় : মির্জা ফখরুল Nov 15, 2025
img
শেষ মুহূর্তের গোল আটকাতে ফোকাস ও কৌশল বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ Nov 15, 2025
img
আমি জিতলেই জিতবে বাংলাদেশ : মিথিলা Nov 15, 2025
img
প্রীতি ম্যাচে রাতে সেনেগালের বিপক্ষে মাঠে নামছে ব্রাজিল Nov 15, 2025
img
ভারতের কোনো দালালকে ভোট দেবেন না: মাহমুদুর রহমান Nov 15, 2025
img
কলকাতায় আ.লীগ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ট্রেনিং দিচ্ছে : হাফিজ উদ্দিন Nov 15, 2025
img
নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে দুর্নীতি কমানো মুশকিল হবে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য Nov 15, 2025
img
নেত্রকোনায় পুকুরে ডুবে প্রাণ গেল ২ জনের Nov 15, 2025
img
হাতিরঝিলে ককটেল বিস্ফোরণ, আগুন মোটরসাইকেলে Nov 15, 2025
img
প্রকাশ পেল আইপিএল দলগুলোর নিলামের বাজেট Nov 15, 2025
img
জাপাকে হাত-পা বেঁধে সাঁতার প্রতিযোগিতায় নামাতে চায় সরকার : জি এম কাদের Nov 15, 2025
img
মানুষকে ভালোবাসা কঠিন নয়, ছড়িয়ে দিলেই বাড়ে: কোয়েল মল্লিক Nov 15, 2025
img
ঢাবি হঠাৎ উত্তাল, ১৫ মিনিটের আলটিমেটাম উপাচার্যকে Nov 15, 2025
img
শেবাগের এক যুগের টেস্ট ক্যারিয়ার রেকর্ড ভেঙে দিলেন রিশভ পন্ত Nov 15, 2025
img
বাগেরহাট কারাগারে প্রাণ গেল ভারতীয় জেলের Nov 15, 2025