লঞ্চের ছাদে যাত্রী উঠালেই এবার মামলা-জেল: বিআইডব্লিওটিএ

পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে শুক্রবার থেকেই বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষের ভিড় শুরু হয়ে গেছে। অন্যান্য বছরের মতো এবার রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার মানুষ এ লঞ্চ টার্মিনাল ব্যবহার করে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত করে। প্রায় ২২০টি লঞ্চ এবার যাত্রী পরিবহনের কাজে নিয়োজিত। যাত্রী বেশি হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে লঞ্চমালিকদেরও।

এবারও নিয়ম অমান্য করে লঞ্চের ছাদের যাত্রী উঠানোর আশঙ্কা করছেন সাধারণ যাত্রীরা। তাদের বক্তব্য, আগের বছরগুলোর মতো লঞ্চের ছাদে যাত্রী উঠানো হবে। লঞ্চের মালিকদের মদতেই এই কাজটি করে থাকেন লঞ্চ কর্মচারী-কর্মকর্তারা।

সদরঘাটে এসব বিষয়গুলো মনিটরিং করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)।

তারা বলছে, আমরা যদি লঞ্চের ছাদে একটি মানুষকে দেখতে পাই, তবে লঞ্চের স্টাফ ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা ও জেলও হতে পারে।

নৌ সেবা ও পরিবহনের সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) এবং ঢাকা নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্প্রতি সভা শেষে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে।

প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের সময় রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী প্রায় ৪০ লাখ যাত্রী নৌযাত্রায় শামিল হন। এর মধ্যে অধিকাংশ যাত্রীই প্রতিবছর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) এবং ঢাকা নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে অভিযোগ করে থাকেন। এবার সেসব বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে রোডম্যাপ নির্ধারণ করছেন নৌ কর্তা-ব্যক্তিরা।

সম্প্রতি বিআইডব্লিওটিএ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে লঞ্চের ফিটনেস চেকিং, লঞ্চের সংখ্যা, যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা, যাত্রীদের টার্মিনালে আসা ও নিরাপদে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে টার্মিনাল ত্যাগ ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।

ঈদ যাত্রা নিয়ে সার্বিক বিষয়ে বিআইডব্লিওটিএ’র ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক আলমগীর কবির বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও যাত্রীদের খুব ভালোভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে ও ফেরাতে পারব। লঞ্চের ছাদে যদি কোনো যাত্রী উঠে তবে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আর লঞ্চের মালিকদের বলে দেয়া হয়েছে যাতে এসব কাজ তারা না করে।’

এদিকে ঈদ উপলক্ষে আসছে পাঁচটির মতো নতুন আধুনিক লঞ্চ। এদের মধ্যে রয়েছে মানামি, অ্যাডভেঞ্চার-৫, কুয়াকাটা-২, রাজহংস-১০ ও সুন্দরবন-১৪ নামের আর একটি লঞ্চ। এছাড়া প্রায় সব লঞ্চ ঈদে দ্বিগুণ সার্ভিস দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করবে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবছরের মতো এবারো যাত্রী নামানো শেষে সঙ্গে সঙ্গে খালি লঞ্চ ফেরত আসবে এবং পুনরায় গন্তব্যে ছেড়ে যাবে।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী ২২০টি লঞ্চের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিনের প্রায় ২০ হাজার টিকিট বুকিং হয়েছে। এদিকে যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্যের লঞ্চগুলোতে কেবিনের আগাম টিকিটের জন্য শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত হয়ে লঞ্চে লঞ্চে খোঁজ নিচ্ছেন।

যাত্রীদের অভিযোগ, কেবিনের টিকিটগুলো মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন লঞ্চের মালিকেরা। তারা নিজেদের পরিচিত লোকদের জন্য টিকিট রেখে দেন। আর সাধারণ যাত্রীরা আগেভাগে সংগ্রহ করতে এসেও টিকিট না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন।

ঈদ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। শনিবার সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অনেক যাত্রী টিকিট সংগ্রহ করতে আসেন। প্রায় সবকটি লঞ্চের কেবিনের টিকিটের সংকট দেখা দিয়েছে। লঞ্চের যাত্রীরা কেবিনের টিকিট না পেয়ে লঞ্চের ডেকে যাচ্ছেন।

হাশমত হোসেন নামের এক যাত্রী বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘আজ বাড়ি যাচ্ছি। টার্মিনালে টিকিট বিক্রির কাউন্টারগুলো বন্ধ পেয়েছি। তাই ডেকে যাচ্ছি। টার্মিনালে নাকি লঞ্চের কেবিনের টিকিট বুকিং বিক্রি শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগেই।’

বরগুনাগামী পূবালী-১ লঞ্চের কর্মচারী সলিম মিয়া বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘ঈদের আগে লঞ্চের ছাদে লোক উঠবেই। এটাকে আপনি প্রশাসন বা আমাদের দিয়ে নামাতে পারবেন না। কারণ যাত্রীরা এ রকমই।’

এ বিষয়ে লঞ্চমালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, প্রতিদিনের চেয়ে ঈদ মৌসুমে কেবিনের যাত্রী বেশি থাকে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী লঞ্চ কম। যারা প্রতিদিন লঞ্চে যাতায়াত করেন, তারা আগে থেকেই টিকিট বুকিং দিয়েছেন। এছাড়াও আমাদের নিষেধ থাকা শর্তেও যাত্রীরা লঞ্চের ছাদে উঠে। প্রশাসন ও আমাদের তোয়াক্কা পাবলিক করে না’- বলেও জানান ‍তিনি।

অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপ-পরিচালক কায়সারুল ইসলাম বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘যারা ছাদে লোক উঠাবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এটি শুধুমাত্র বিআইডব্লিউটিএ’র কথা নয়। এটি নৌমন্ত্রীর কথা।’

 

টাইমস/টিআর

Share this news on:

সর্বশেষ