কিশোর মুর্তজার মৃত্যুদণ্ড থেকে সরে এল সৌদি

আরব বসন্তের র‍্যালিতে নেতৃত্ব দেয়ায় কারণে ১৩ বছর বয়সে আটক মুর্তজা কুরেইরিসকে দেয়া মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে সৌদি আরব। দেশটির এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।

শনিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান ওই কর্মকর্তা।  তবে এ বিষয়ে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

২০১১ সালে আরব বসন্তে উত্তাল কয়েকটি দেশ। সৌদি রাজতন্ত্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের দাবিতে ওই সময় দেশজুড়ে বিক্ষোভের সূচনা হয়। এরই অংশ হিসেবে মুর্তাজা কুরেইরিস বন্ধুদের নিয়ে সাইকেল নিয়ে রাজপথে নামে। ৩০ জন বন্ধুর দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিল মুর্তাজা কুরেইরিস। সে চিৎকার করে বলছে, ‘সৌদিতে সবাই মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত দেখতে চায়।’

মুর্তাজা কুরেইরিসের দুঃসাহস সৌদি কর্তৃপক্ষের নজর এড়ায়নি। সে সময় সৌদি সরকার অল্প বয়সী বালকদের জড়ো হওয়ার এ বিষয়টি ‘পর্যবেক্ষণ’ করে। ওই বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে তিন বছর পর মুর্তাজাকে গ্রেপ্তার করে সৌদি পুলিশ। তখন মুর্তজার বয়স ছিল ১৩। ৫ বছর ধরে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে তাকে।

মুর্তাজা কুরেইরিসের বাড়ি সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে। আরব বসন্তের র‌্যালিতে অংশ নেয়ার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর।

রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, মুর্তাজাকে প্রাথমিকভাবে যে ১২ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল, তা তার গ্রেপ্তারে সময় থেকেই হিসাবে ধরা হচ্ছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক বিধায় তার ৪ বছরের কারাদণ্ড কমে যায়। সে হিসাবে তার কারাদণ্ড বাকি থাকে ৮ বছর। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হওয়ায় এই ৮ বছর পূর্ণ হবে ২০২২ সালে। তখনই তার মুক্তি মিলতে পারে।

সিএনএন এক বিশেষ অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানতে পারে, সুদীর্ঘ নিপীড়ন ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে মুর্তজার মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ সরকার বিরোধিতার শাস্তি হিসেবে ওই শিশুর মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষিত হয়েছে।

এ নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়ে সৌদির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তোলে। তারা অবিলম্বে মুর্তাজাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়।

এদিকে বুধবার অস্ট্রিয়া সরকার জানায়, মুর্তাজার মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে তারা ভিয়েনাতে সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত ধর্মীয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

তার পরই সৌদি সরকারের ওই কর্মকর্তা বিশেষ সাক্ষাৎকারে মুর্তাজার বিষয়ে সেখানকার সরকারের বর্তমান অবস্থানের কথা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে না মুর্তজাকে। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে না।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মৃত্যুদণ্ড আদতে সরকারের শিয়াবিরোধী দমন অভিযানের অংশ। তবে সৌদি আরব বরাবরই এই শিয়াবিরোধী অভিযানের ব্যাপারে অস্বীকার করে আসছে।

আরও পড়ুন...

বিক্ষোভের কারণে কিশোরের শিরশ্ছেদ করতে যাচ্ছে সৌদি

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ