মাস্কের অনুশোচনায় ট্রাম্পের ইতিবাচক বার্তা: ‘ভালো কাজ করেছে সে’

বিতর্কিত পোস্ট নিয়ে এলন মাস্কের ‘অনুশোচনা’ প্রকাশের পর বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে মাস্কের সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি মেরামতের ইঙ্গিত এখনো দেননি ট্রাম্প।

নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “সে যে অনুশোচনা প্রকাশ করেছে, এটা খুবই ভালো একটা বিষয় ছিল বলে আমি মনে করি।” তবে টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধানকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রেসিডেন্ট আজ সকালে এলনের দেওয়া বিবৃতিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং তিনি এর জন্য কৃতজ্ঞ। আমরা এখন আমেরিকান জনগণের কাজে মনোনিবেশ করছি।” তিনি আরও জানান, মাস্কের সঙ্গে থাকা সরকারি চুক্তিগুলো পুনর্মূল্যায়নের কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি, যদিও ট্রাম্প তা বিবেচনা করছেন বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

সম্প্রতি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ মাস্ক লিখেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তাঁর কিছু পোস্ট “অত্যন্ত বাড়াবাড়ি” ছিল এবং এখন তিনি সেগুলো নিয়ে অনুশোচনা করছেন। এর আগেই এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি পুনরায় সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি উন্মুক্ত মনে করছেন। “আমি কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম, কিন্তু তার প্রতি কোনো বিরূপ মনোভাব নেই,” বলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি মনে করি, মাস্ক খুবই খারাপভাবে অনুতপ্ত যে তিনি ওসব বলেছিলেন।” এর আগে সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পকে আক্রমণ করে মাস্ক তাঁর কর পরিকল্পনাকে “ঘৃণ্য এবং অপমানজনক বিল” হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন এবং আমেরিকানদের আহ্বান জানিয়েছিলেন তাঁদের প্রতিনিধিদের ফোন করে “বিলটি বাতিল” করতে। মাস্কের দাবি ছিল, এই বিল অর্থনৈতিক মন্দা ডেকে আনবে। তবে বিলটি এরই মধ্যে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে পাস হয়েছে এবং এখন সিনেটের বিবেচনায় রয়েছে।

তবে মাস্কের বিতর্কিত পোস্টের সবচেয়ে বিস্ফোরক দাবি ছিল, ট্রাম্পের নাম নাকি জেফ্রি এপস্টেইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক গোপন সরকারি নথিতে রয়েছে। হোয়াইট হাউস সরাসরি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, “মাস্ক তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে” এবং স্পেসএক্সসহ তাঁর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে থাকা সরকারি চুক্তি বাতিল করার হুমকি দেন। ওই চুক্তির পরিমাণ প্রায় ৩৮ বিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হয়।

এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “তিনি (মাস্ক) প্রেসিডেন্টের পদকে অসম্মান করেছেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আপনি প্রেসিডেন্টের অফিসকে অবজ্ঞা করতে পারেন না।”
সম্প্রতি মাস্ক তাঁর একাধিক পোস্ট মুছে ফেলেছেন, যার মধ্যে ট্রাম্পের অভিশংসনের ডাকও ছিল। যদিও মাত্র কয়েক মাস আগেও তিনিই ছিলেন ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সবচেয়ে বড় আর্থিক অনুদানদাতা এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বিবেচিত।

ট্রাম্পের সাবেক সহযোগী স্টিভ ব্যানন পর্যন্ত প্রকাশ্যে মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সাংবাদিকদের বলেন, “প্রেসিডেন্ট মাস্কের আচরণে বিরক্ত হলেও তিনি দীর্ঘমেয়াদি দ্বন্দ্ব চান না।” ভ্যান্স আরও জানান, তিনি মাস্ক ও ট্রাম্প দুজনের সঙ্গেই কথা বলেছেন এবং মাস্ক এখনো প্রশাসনের প্রতি সহানুভূতিশীল রয়েছেন।

এই বিরোধের মধ্যে রিপাবলিকান নেতারা দুজনকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা পুরো দ্বন্দ্বটি দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন।

এলন মাস্কের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের অবনতি ঘটে তখন, যখন মাস্ক তাঁর নেতৃত্বাধীন ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ বা ‘ডোজ’ নামক সরকারি কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার ১২৯ দিনের মাথায় কমিটি থেকে সরে দাঁড়ান মাস্ক। ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যয় সংকোচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কমিটির অর্জন সীমিতই ছিল। তবে মাস্কের নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা এখনো বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় দায়িত্বে রয়েছেন।

একসময় ঘনিষ্ঠ সহযোগী হলেও ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক মতানৈক্যে এলন মাস্ক ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক ভেঙে পড়ে। মাস্কের সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক কটাক্ষ আর ট্রাম্পের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। তবে এখন যখন মাস্ক অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন, ট্রাম্প তা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। যদিও সম্পর্কের পুরোনো উষ্ণতায় ফেরার আভাস এখনো পরিষ্কার নয়, অনেকেই আশাবাদী যে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের এই দ্বন্দ্ব দ্রুতই মীমাংসিত হবে।

কেএন/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডাদেশে ভারতের প্রতিক্রিয়া Nov 17, 2025
img
ভুয়া খবরে ক্ষুব্ধ নোরা Nov 17, 2025
img
নাচ নিয়ে কটাক্ষ, মুখ খুললেন মালাইকা Nov 17, 2025
img
অভিনেত্রী শাওনকে ‘ভারতীয় গুপ্তচর’ অ্যাখ্যা, দ্রুত গ্রেফতার দাবি Nov 17, 2025
img

মিস ইউনিভার্সের মঞ্চ থেকে মিথিলা

‘এখন আমাদের দেশের সম্মানের প্রশ্ন’ Nov 17, 2025
img
১০ বছর আগের সাকা চৌধুরীর সেই ভবিষ্যদ্বাণী ভাইরাল Nov 17, 2025
img
ইসলামী ব্যাংকে ভয়াবহ আগুন Nov 17, 2025
img
ধর্মেন্দ্রর শারীরিক খোঁজ নিতে হেমার বাড়িতে শত্রুঘ্ন-পুনম Nov 17, 2025
img
৫ দিনের শুভেচ্ছা সফরে চট্টগ্রামে পৌঁছেছে রাশিয়ার নৌবাহিনীর জাহাজ ‘গ্রেমেয়াশচি’ Nov 17, 2025
img
দল হিসেবে আ. লীগের বিচার শুরু করতে হবে: নাহিদ ইসলাম Nov 17, 2025
img
নির্বাচন কমিশনের নিয়ত পরিষ্কার : সিইসি Nov 17, 2025
img
কিছু লোক ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতি উত্তেজিত করতে চায়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Nov 17, 2025
img
৭৭ ক্রিকেটারকে নিয়ে আইপিএলে এবার ২৩৮ কোটি রুপির লড়াই Nov 17, 2025
img
শেখ হাসিনাকে ফেরাচ্ছে না ভারত: বিবিসি Nov 17, 2025
ভারতের সাথে আমরা জিতব: প্লেয়ারদের কনফিডেন্স আছে : অধিনায়ক জামাল Nov 17, 2025
img
আরাধ্যার গ্ল্যামার–বিমুখ জীবন নিয়ে অভিষেকের মন্তব্য Nov 17, 2025
img
শাসক নয়, সেবক হয়ে উঠার রাজনীতি করুন: শিশির মনির Nov 17, 2025
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সড়কে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার Nov 17, 2025
img
ধৈর্য, সতর্কতা ও ঐক্য বজায় রাখুন: জামায়াত আমির Nov 17, 2025
img
চোখধাঁধানো ফ্রি-কিকে বাবার মতোই গোল সিরো মেসির Nov 17, 2025