ছেলেকে মেডিক্যালে পড়াতে একজন শিক্ষক বাবার আকুতি

মানুষ গড়ার কারিগর খাইরুল ইসলাম(৪২)। ঝিনাইদহ শহরের বনানীপাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। গত ২০ বছর যাবৎ শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর হাসানবাগ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নন-এমপিও শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। স্ত্রী বেগম ইতি খাতুন(৩২) একজন গৃহিণী। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মুশফিকুন নাহার(৬) প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। আর ছেলে খালেদুর রহমান(১৬)  এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এখন ঢাকায় রেটিনা কোচিং সেন্টারে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে খালেদুর রহমানের পড়াশুনা বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে।

বুধবার খালেদুর রহমানের বাবা খায়রুল ইসলাম বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘আমার ছেলে শৈশব থেকেই মেধাবী। প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় সে মেধার স্বাক্ষর রেখে আসছে। ২০১১ সালে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা ও ২০১৪ সালে জেএসসিতে আমার ছেলে গোল্ডেন প্লাস ও বৃত্তি পেয়েছিল। ২০১৭ সালে ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) পাস করে।  এবার উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে খালেদুর জিপিএ-৫ পেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে এখন ঢাকার ফার্মগেটে রেটিনাতে মেডিক্যালে ভর্তির জন্য কোচিং করছে। তার মেসের খরচ বাবদ প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে ৮ হাজার টাকা পাঠাতে হয়। কিন্তু আমার এই টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই। নির্দিষ্ট সময়ে তাকে টাকা দিতে পারছি না। এই কারণে আমার ছেলের কোচিং করা বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে।’

খাইরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী বেগম ইতি খাতুন

তিনি বলেন, ‘আমি গত ২০ বছর একই স্কুলে শিক্ষকতা করছি। স্কুলের তহবিল থেকে মাত্র দুই হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে আমার কিছুই হয় না।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন অভিভাবক হিসেবে আজ আমি আপনাদের দ্বারস্থ হয়েছি। আপনাদের সহযোগিতা পেলে আমার ছেলেটিকে মানুষ করতে চাই, পড়াতে চাই। টাকার অভাবে যেন আমার ছেলে ঢাকা থেকে কোচিং ছেড়ে বাড়িতে ফিরে না আসে।’

খাইরুল ইসলাম ঝিনাইদহ শহরের বনানীপাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। অভাবী পরিবারে খালেদুরই এখন আশার আলো।

খালেদুর রহমানের এইচএসসি পরীক্ষার নম্বরপত্র

২০১৭ সালে খালেদুর রহমান ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পরেও এমন আর্থিক সংকটের মুখে পড়েন। তার ভর্তি ও বই কেনার টাকা ছিল না। ছিল না পোশাক বানানোর টাকা। সে সময় ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু ও এলাইভ এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক মেহেদী হাসান মাসুদের আর্থিক সহায়তায় কলেজে পড়াশুনা সম্পন্ন করেন খালেদুর। এ ছাড়া কেসি কলেজের অধ্যক্ষ ড. বিএম রেজাউল করিমসহ তার বিভাগীয় শিক্ষকরাও খালেদুর রহমানের পড়াশুনায় সহায়তা প্রদান করেন।

খাইরুল ইসলাম বাংলাদেশ টাইমসের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমি আমার শিক্ষকতা জীবনের চিরকাল সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। আজ আমার ছেলের জন্য আপনার কাছে হাত পেতেছি। দয়া করে আমার ছেলেকে আপনারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিন। টাকার অভাবে তার পড়াশুনা যেন বন্ধ না হয় সেই সহযোগিতাটুকু করুন।’

 

যোগাযোগ:

খাইরুল ইসলাম

মোবাইল নম্বর: ০১৭২২-৯৫৩৭৭১

ব্যাংক ঠিকানা:

মো. খাইরুল ইসলাম

ব্যাংক হিসাব নম্বর: ৩৪০৭৫১৬৭

সোনালী ব্যাংক লি.

হরিনারায়ণ বাজার শাখা, কুষ্টিয়া

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মিথিলা হাতে উঠলো ভারতের ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার May 04, 2024
img
আট দফা কমার পর বাড়লো স্বর্ণের দাম May 04, 2024
img
মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 04, 2024
img
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ আগুন May 04, 2024
img
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার May 04, 2024
img
আইপিএলে প্লে অফে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে যারা May 04, 2024
img
শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা, ৬ ট্রেনের যাত্রা বাতিল May 04, 2024
img
সরকার গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করছে: প্রতিমন্ত্রী May 04, 2024
img
শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বাড়াতে কাজ করছে সরকার : শিক্ষামন্ত্রী May 04, 2024
img
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস May 04, 2024