খুলনায় ভারি বর্ষণে রাস্তাঘাট ডুবে জনদুর্ভোগ চরমে

টানা ভারি বর্ষণে খুলনা নগরীর অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টিপাতে রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে যা খুলনায় এ বছরের সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস।

খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে এ বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাত ৩টা থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি চলে সকাল ৬টা পর্যন্ত। এরপর হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয় সকাল ৯টা পর্যন্ত। রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত খুলনায় ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

বৃষ্টিতে মহানগরীর শান্তিধাম মোড়, রয়্যাল মোড়, বাইতি পাড়া, তালতলা, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, পিটিআই মোড়, সাতরাস্তার মোড়, শামসুর রহমান রোড, আহসান আহমেদ রোড, দোলখোলা, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, ময়লাপোতা, শিববাড়ি মোড়, বড় বাজার, মির্জাপুর রোড, খানজাহান আলী রোড, খালিশপুর মেঘার মোড়, দৌলতপুর, লবণচরা বান্দা বাজারসহ প্রায় সব এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও পানি উঠেছে। অনেক এলাকার ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকে গেছে।

নগরবাসী বলছেন, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা, খাল ভরাট, অবৈধ দখল ও বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষসহ নানা কারণে সামান্য বৃষ্টিতে নগড়জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন নগরবাসী।

এদিকে, বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল খুবই কম। পেশার তাগিদে বা জরুরি কাজে যারা বের হয়েছেন, জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা বা ইজিবাইক না পেয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে অবিরাম বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচল কম থাকার সুযোগে রিকশা ও ইজিবাইক চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। নিরুপায় হয়ে যাত্রীদের অতিরিক্ত অর্থ দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে।

খালিশপুরের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, সকাল থেকে খালিশপুর এলাকা যানবাহন শূণ্য। অফিসে যেতে ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে। নগরীর মুজগুন্নী এলাকায় শিশুপার্কের সামনে হাঁটু পানি জমে গেছে। এছাড়া ভারী বৃষ্টিতে খালিশপুরের অধিকাংশ রাস্তা তলিয়ে গেছে। সব জায়গায় পানি আর পানি।

পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার বাসিন্দা শেখ রফিক বলেন, পানিতে নগরবাসী গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। পূর্ব বানিয়া খামারসহ বি কে মেইন রোড হাটুপানি জমে আছে। আশপাশের প্রায় সব ঘরবাড়ির নীচতলার অনেকাংশই পানিতে তলিয়ে আছে। পানি উত্তোলনের পাম্প মেশিনও পানির নিচে। ফলে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অধিকাংশ পরিবারে রান্নার চুলা জ্বলেনি। এলাকার দোকানপাটও সব বন্ধ।

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবিরুল আজাদ বলেন, মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। খাল খনন ও অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন দ্রুততার সঙ্গে অভিযান শুরু হবে। কেডিএ এভিনিউর ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ শুরু হয়েছে। ২০৩০ সালের জুনে এসব কাজ শেষ হবে। তখন নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: