আসামে নাগরিক তালিকায় ‘রাষ্ট্রহীন’ ১৯ লাখ

ভারতের আসামে প্রকাশিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন। খসড়া তালিকায় এই সংখ্যাটা ছিল ৪১ লাখ। শনিবার সকাল ১০টায় আসামের নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়।

তালিকা প্রকাশের পর এনআরসির রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা জানান, রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন তাতে স্থান পেয়েছেন। জায়গা হয়নি ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের। আংশিক স্বস্তির বিষয় এটাই, খসড়া তালিকায় যত নাম বাদ পড়েছিল, প্রায় ৪২ লাখ, চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়া সংখ্যা তার ৫০ শতাংশেরও কম।

এই তালিকা রাজ্য বিজেপির বিস্ময়, ক্ষোভ ও উদ্বেগের প্রধান কারণ। কেননা, ‘বিদেশি খেদাওয়ের’ যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু, চূড়ান্ত তালিকা তা সফল করতে পারেনি।

অনেকেই এনআরসির পদ্ধতি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন ইতোমধ্যেই। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্য বিজেপির বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীও। তাদের আশঙ্কা, বহু বাঙালি হিন্দুর নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। অনেক বিদেশি এই তালিকায় ঢুকে পড়তে পারেন। গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে এনআরসি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল।

তিনি পরে জানান, তালিকা থেকে বিদেশিদের বাদ দিতে কেন্দ্র আইন আনারও চিন্তাভাবনা করছে যাতে সঠিক নাগরিকরা তালিকা থেকে বাদ না পড়েন।

আসামের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও এই এনআরসি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, বাংলাদেশ লাগোয়া জেলা দক্ষিণ সালমারা বা ধুবুরিতে তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম। তুলনায় কারবি আংলংয়ের মতো ভূমিপুত্র এলাকায় বাদ পড়েছেন বেশি মানুষ। সেই কারণেই তারা এখানেই থামছেন না।

হিমন্ত বলেছেন, ‘আরও তালিকার অপেক্ষায় থাকুন। অপেক্ষা করুন অন্য ব্যবস্থার।’ তিনি বলেছেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম এনআরসি প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু সমাধান হোক। ভালোয় ভালোয় কাটুক। কিন্তু এটাও ঠিক, এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আসাম বিদেশিমুক্ত হবে না। সে জন্য বিজেপির ওপরেই আপনারা ভরসা রাখুন।’

তালিকা প্রকাশের পর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করেই গোটা রাজ্যকে নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। রাজ্য জুড়ে ৬০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আরও ২ হাজার আধাসেনা পাঠিয়েছে কেন্দ্র।

এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কায় থাকা নাগরিকদের অবশ্য আশ্বস্তই করছে ভারত সরকার।

যদিও রাজ্য সরকার বলেছে, ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিরা এখ্নই বিদেশি বলে গণ্য হবেন না। বরং তাদের সামনে এখনো নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ আছে।

আগামী ১২০ দিনের মধ্যে তাদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে বলা হয়েছে। এই বিষয়ে শুনানির জন্য রাজ্যজুড়ে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে শুনানির জন্য রাজ্যজুড়ে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলা হবে। ইতিমধ্যেই ১০০ ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই খোলা হবে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  তরফে এটাও জানানো হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে মামলাটি হেরে যান, তিনি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হতে পারেন।

ভারতে বিচার ব্যবস্থা এমনিতেই দীর্ঘমেয়াদী। তার ওপর প্রতিটি আদালতেই সাধ্যের অতিরিক্ত মামলার বোঝা রয়েছে। এ অবস্থায় নাগরিকত্ব প্রমাণের সম্ভাব্য দীর্ঘ এবং জটিল আপিল আবেদন প্রক্রিয়া দেশটির আদালতকে আরো ভারাক্রান্ত করবে।

নাগরিকপঞ্জি থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা মূলত অতি দরিদ্র এবং বেশিরভাগই মুসলমান। যদিও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের আশঙ্কা, বাঙালি অনেক হিন্দুর নামও তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। সে ক্ষেত্রেও দেখা যাবে গরিব লোকজনই আসলে বাদ পড়েছেন।

দরিদ্র এ মানুষগুলো আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘোরার এবং মামলা লড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে পাবে সেটাও বড় প্রশ্ন।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: