সিন্ধু চুক্তিতে ভারতের বিপক্ষে রায় আন্তর্জাতিক আদালতের, স্বাগত জানাল পাকিস্তান

ভারতকে সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরভিত্তিক আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন-পিসিএ)। গত আট আগস্ট এই ঘোষণা করেছেন পিসিএ।

আদালত আরও বলেছেন, চুক্তির মূল নথির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কোনো স্থাপনাও (জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাঁধ বা এ জাতীয় স্থাপনা) সিন্ধু নদ কিংবা সিন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নদ-নদীতে স্থাপন করা যাবে না।

গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের পেহেলগামে ভয়াবহ এক জঙ্গি হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি পর্যটক নিহত হন। পরে পাকিস্তানি কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট এ হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। 

পেহেলগামে হামলার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে ভারত। এর ফলে পাকিস্তানের তিন নদী সিন্ধু, চেনাব এবং ঝিলামের পানি প্রবাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়ে দেশটির কৃষি উৎপাদন।

ভারত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে মামলা করে পাকিস্তান। ০৮ আগস্ট সেই মামলা রায় দিয়েছেন আদালত।

“সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির মূল শর্ত হলো সিন্ধু অববাহিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় ৩ নদী, যেগুলো পাকিস্তানের ভূখণ্ডে পড়েছে— সেগুলোতে পানির প্রবাহ বাধামুক্ত রাখবে ভারত। পিসিএ ভারতকে চুক্তির মূল শর্তে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।”

সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই নদের ভারতীয় অংশের ওপর বাঁধ নির্মাণ করা হবে। আদালত এ বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন।

“ভারত যদি সিন্ধু নদের ওপর বাঁধ বা এ জাতীয় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে চায়, তাহলে অবশ্যই চুক্তির শর্ত মেনে এবং চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সেটি নির্মাণ করতে হবে।”

আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এই রায়ের পর ভারত এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে পাকিস্তান স্বাভাবিক কারণেই স্বাগত জানিয়েছে এই রায়কে। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রায়ের প্রতিক্রিয়া বলা হয়েছে, “গত ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি ইস্যুতে যে রায় দিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাচ্ছে পাকিস্তান। আদালত ভারতকে সিন্ধু নদের পানি ‘বয়ে যেতে দেওয়া’র নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এই নদের ওপর বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে মূল চুক্তির শর্ত স্মরণে রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন।”

সিন্ধু পানি চুক্তি কী

ভারতের উজান থেকে পাকিস্তানের সিন্ধু অববাহিকায় প্রবাহিত নদীগুলোর পানি ব্যবহার নিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের।

সিন্ধু পানি চুক্তি অনুসরণ করেই এসব নদীর পানি ব্যবহার করা হয়। ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান তাতে স্বাক্ষর করে।

চুক্তিটির মাধ্যমে সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর পানিকে দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয় এবং পানিবণ্টনের নিয়ম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সিন্ধু অববাহিকার পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদী ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয় ভারতকে। আর পাকিস্তানকে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদ-নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের অধিকাংশ পানি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।

চুক্তিটি কোনো দেশ একতরফাভাবে স্থগিত বা বাতিল করার বিধান নেই। বরং এতে সুস্পষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাব নদীগুলোর প্রবাহ পাকিস্তানের কৃষি, শহর এবং জ্বালানি ব্যবস্থার মূল। এই মুহূর্তে, পাকিস্তানের জন্য এই পানির কোনো বিকল্প নেই। পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। এবং এটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর নিশ্চিত প্রবাহের ওপর নির্ভর করে।

ইউটি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ভারত Nov 24, 2025
শান্তি আলোচনায় নতুন মোড়: ইউক্রেনের উদ্বেগ বাড়ছে Nov 24, 2025
গণমাধ্যমে প্রকৃত খবরের জন্য যুদ্ধ করতে হয়: তালাত মামুন Nov 24, 2025
গণমাধ্যমের কমিশন তৈরি হয়েছে কিন্তু রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়নি: মির্জা ফখরুল Nov 24, 2025
বাংলাদেশের মিডিয়াকে শিল্পগোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হতে দেয়া ঠিক না : নুরুল হক নুর Nov 24, 2025
img
বলিউডের ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ ধর্মেন্দ্র, অমিতাভ যদি ‘শচীন’ হন, তবে তিনি হলেন ‘দ্রাবিড়’ Nov 24, 2025
img
ডেঙ্গুতে একদিনে প্রাণ হারাল ২, হাসপাতালে ৭০৫ Nov 24, 2025
img
সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তায় হুমার কড়া বার্তা Nov 24, 2025
img
দেশের মালিক জনগণ, সরকার নয় : সুলতানা কামাল Nov 24, 2025
img
চট্টগ্রাম জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে ধিক্কার জানাই: ইশরাক হোসেন Nov 24, 2025
img
মুকুট না পেলেও দেশের মন জিতলেন মিথিলা, ফেরার পর শুরু নতুন অধ্যায় Nov 24, 2025
img
জিজ্ঞাসাবাদে আক্রমণাত্মক আচরণ করা হয়েছে, অভিযোগ শহীদুল হকের আইনজীবীর Nov 24, 2025
img
তিলককে চার নম্বরে খেলাতে চাইছেন ইরফান পাঠান Nov 24, 2025
img
রাশিয়া ও সৌদি আরব থেকে ৭৫ হাজার টন সার কিনবে সরকার Nov 24, 2025
img
প্রথমবারের মতো দলীয় সভায় বক্তব্য রাখলেন জাইমা রহমান Nov 24, 2025
img
ব্রুনাইয়ের জালে বাংলাদেশের ৮ গোল Nov 24, 2025
img
ভূমিকম্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বিশেষজ্ঞদের ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা : রিজওয়ানা Nov 24, 2025
img
শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের অভিযোগে ইবি অধ্যাপক চাকরিচ্যুত Nov 24, 2025
img
ধর্মেন্দ্রর শেষ খবর কেন কাওকে জানায়নি পরিবার? Nov 24, 2025
img
নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুলের ৪৪ কোটি টাকার জমি জব্দ Nov 24, 2025