রং ফর্সাকারী ক্রিমে যেসব বিষাক্ত উপাদান থাকে

রাস্তায় বড় বড় বিলবোর্ড থেকে শুরু করে টিভি, পত্রিকা বা সোশ্যাল মিডিয়াতে রং ফর্সাকারী ক্রিমের বিজ্ঞাপনের রাজত্ব চোখে পড়ার মতো। বিজ্ঞাপনগুলোতে বার বার আপনাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে যে, গায়ের রং ফর্সা না হলে জীবনে সফলতার সম্ভাবনা সুদূর।

যদিও সফলতা বা প্রত্যয়ের সঙ্গে ফর্সা বা কালোর আদতে কোনো সম্পর্কই নেই, তবুও আমরা চোখ বুজে এসব গাল ভরা বিজ্ঞাপনের গপ্পোগুলি গিলে নিতে ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই বাজারেও রং ফর্সাকারী ক্রিমের কাটতি ব্যাপক।

সে যাইহোক, মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা যে কথাটি ভুলে যাই তা হলো, সৌন্দর্য বৃদ্ধির আশায় ব্যবহৃত এসব পণ্যগুলি আমাদের সৌন্দর্যহানির কারণ হয়ে উঠতেও পারে যে কোনো সময়। কারণ রং ফর্সাকারী ক্রিমের কিছু উপাদান আমাদের ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ত্বকের জন্য ক্ষতিকর ও বিষাক্ত উপাদান নিয়ে ভারতের লক্ষ্নৌতে অবস্থিত মেদান্ত হাসপাতালের একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. শেলি কাপুরের সুচিন্তিত মতামত বাংলাদেশ টাইমসের পাঠাকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

স্টেরয়েড
ভাবা যায়! রং ফর্সাকারী ক্রিমে স্টেরয়েডের মতো ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে যেসব ক্রিম খুব দ্রুত ও কার্যকর ফলাফলের আশ্বাস দেয়, সেগুলিতে স্টেরয়েড থাকার সম্ভাবনা খুবই বেশি। দ্রুত আর কার্যকর ফলাফল পেতে গিয়ে আপনি হয়ত উল্টো ফল পাবেন। চিরস্থায়ী দাগ, ব্রণ, এলার্জি বা ক্ষতের প্রভৃতির শিকার হবেন।

এ বিষয়ে ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. শেলি কাপুর বলেন, “বর্তমানে অনেকেই টপিক্যাল স্টেরয়েডের কথা বলেন। এসব স্টেরয়েডের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। বাজারে সহজলভ্য অনেক ক্রিমেই স্টেরয়েড থাকে, কিন্তু প্যাকেটে সেটা লেখা থাকে না। বিশেষত রং ফর্সাকারী ক্রিমে স্টেরয়েড ব্যবহৃত হয়ে থাকে।”

প্রিজারভেটিভ
ডা. কাপুর বলেন, “সাধারণত রং ফর্সাকারী ক্রিমের ক্ষতিকর প্রভাবগুলোর কারণ এতে থাকা প্রিজারভেটিভ সমূহ। এমন একটি ক্ষতিকর উপাদান হলো প্যারাবেন। প্যারাবেন সস্তা ও সহজলভ্য একটি উপাদান, যা বিভিন্ন কসমেটিকসে ব্যবহার খুব পরিচিত একটি ঘটনা। সুতরাং এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। ক্রিম যদি প্যারাবেনমুক্ত হয় তাহলে প্যাকেটের গায়ে তা লেখা থাকবে।”

সুগন্ধি
আপনার ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহৃত কসমেটিকসের সুগন্ধি আপনার ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। ডা. কাপুর এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, “প্যাকেটের গায়ে হাইপোএলার্জিক লেখা দেখে কিনুন। সুগন্ধিমুক্ত পণ্য ব্যবহার করুন।”

অর্থাৎ আপনি যদি সব কিছুর পরেও রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করবেন বলে ঠিক করেন, তাহলে প্যারাবেনমুক্ত, সুগন্ধিমুক্ত, হাইপোএলার্জেনিক ক্রিম ব্যবহার করুন।

হাইড্রোকুইনান
হাইড্রোকুইনান এক ধরনের ব্লিচিং উপাদান, অনেক রং ফর্সাকারী ক্রিমেই এই উপাদানটি উপস্থিত থাকে। এই উপাদানের অতিরিক্ত ব্যবহার, আপনার ত্বকে কালো কালো ছোপের সৃষ্টি করবে। এর ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এটি জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপে নিষিদ্ধ। এই উপাদান সম্পন্ন যেকোনো কসমেটিক ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

 মার্কারি ও সিসা
কিছু রং ফর্সাকারী ক্রিমে মার্কারি আর সিসার উপস্থিতিও পাওয়া যায়। এই ধাতু দু’টি বিষাক্ত এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ডা. শেলি কাপুর এ বিষয়ে মন্তব্য করেন- “ অনেক প্রসাধনীতেই এই দু’টি বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া যায়। এগুলো ত্বকের অপূরণীয় ক্ষতি সাধনে সক্ষম।” তথ্যসূত্র: এনডিটিভিডটকম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: