ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ বাসক

বাসক ছোট আকৃতির চিরহরিৎ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস আফ্রিকা ও এশিয়ার উষ্ণ অঞ্চল। এ উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Adhatoda yeylanica Nees। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সর্বত্র এটি জন্মে। হিন্দিতে একে বলা হয় আডুসা, বানসা অথবা ভাসিকা। তবে সংস্কৃত নামের ভিত্তিতে এটির ব্যবসায়িক নাম ‘বাসক’। আর্দ্র, সমতলভূমিতে এটি বেশি জন্মে।

আমাদের দেশে অনেক জায়গায় বাসক গাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। গাছটি লম্বায় ১-১৫ মিটার (৩-৫ ফুট) পর্যন্ত হয়। কচি অবস্থায় গাছের গোঁড়া সবুজ হলেও পরিণত অবস্থায় হাল্কা বেগুনি রঙের মতো দেখায়। বাসক পাতা ওষুধ কোম্পানিগুলো কিনে থাকে।

আদি যুগ থেকেই বাসক পাতা ভেষজ গুণে গুণান্বিত। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায়ও বাসকের ভেষজ গুণাবলি প্রমাণিত হয়েছে। শুকনো অথবা তাজা বাসক পাতা, মূল, ফুল, ফল সবই ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে। বাসকে ‘ভাসিসিন’ নামক ক্ষারীয় পদার্থ ও তেল থাকে। সর্দি, কাশি ও জ্বর নিরাময়ে বাসক পাতার নির্যাস বিশেষ উপকারী।

দেহের বিভিন্ন রোগ ছাড়াও পানির জীবাণু মুক্ত করতে, হাত-পা ফুলে গেলে, চামড়ার রং উজ্জ্বল করতেও এ গাছের উপকারিতা অনেক।
বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে যার ফলে ছত্রাক জন্মায় না এবং পোকামাকড় ধরে না বলে ফল প্যাকিং ও সংরক্ষণের কাজে বাসক পাতা ব্যবহৃত হয়।

চলুন জেনে নিই বাসক পাতার নানা ওষধি গুণ সম্পর্কে-

  • বুকে কফ এবং এর জন্য শ্বাসকষ্ট হয় বা কাশি হয়, তখন বাসক পাতার রস ১-২ চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
  • বাসক পাতার ১-২ চামচ রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিলিয়ে খেলে শিশুর সর্দি-কাশির উপকার পাওয়া যায়।
  • এই পাতার রস গোসলের আধা ঘণ্টা আগে মাথায় মাখলে উকুন মরে যায়। এছাড়া আমবাত ও ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থায় বাসক পাতা বেটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
  • প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা থাকলে বাসকের ফুল বেটে ২-৩ চামচ এবং মিছরি মিলিয়ে সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
  • জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলিলিটার পানিতে ফুটিয়ে ২৫ মিলিলিটার থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিন। এরপর দিনে ২ বার করে খাবেন। তাতে জ্বর এবং কাশি দুটোই চলে যাবে।
  • যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তারা বাসক পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে।
  • বাসকের কচি পাতা ১০-১২টি ও এক টুকরো হলুদ এক সঙ্গে বেটে দাদ বা চুলকানিতে লাগালে কয়েক দিনের মধ্যে তা সেরে যায়।

  • বাসক পাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনিসহ প্রতিদিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়।
  • পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে ২০টি বাসক পাতা থেঁতোয়ে ২ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে উষ্ণ অবস্থায় কুলকুচোই করলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
  • যাদের হাঁপানির টান আছে তারা বাসক পাতা শুকনো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরুটের মতো পাকিয়ে, তার সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়।
  • এক কলসি পানিতে তিন-চারটি বাসক পাতা ফেলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্যবহার করতে পারেন।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চলতি বছরই থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ২ Apr 26, 2024
img
পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত Apr 26, 2024
img
নতুন করে বেড়েছে সবজি-মাংসের দাম Apr 26, 2024
img
থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা Apr 26, 2024
img
ভারতে লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে Apr 26, 2024
img
৪৬তম বিসিএসের প্রিলি আজ, মানতে হবে যত নির্দেশনা Apr 26, 2024
img
পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকসহ আটক ৩ Apr 26, 2024
img
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য জানালেন সাকিব Apr 25, 2024
img
গাজায় ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেয়ার অভিযোগ Apr 25, 2024