চেরোনবিল: পারমাণবিক দুর্ঘটনার ভয়ানক ইতিহাস

প্রযুক্তির উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পারমানবিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, মারণাস্ত্র তৈরী, চিকিৎসা প্রভৃতি বহু কাজে রয়েছে এর বিস্তর ব্যবহার। পারমানবিক শক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হয় পারমানবিক রিয়্যাক্টরের।

এই পারমানবিক রিয়্যাক্টরের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা না হলে বা একটু ভুল হলেই ঘটতে পারে ভয়ানক দুর্ঘটনা। এমন একটি পারমানবিক দুর্ঘটনার কথা আমরা আজকে জানব, যা চেরোনবিল পারমানবিক দুর্ঘটনা নামে পরিচিত।

১৯৭০ সালে কিয়েভের ৬৫ মাইল উত্তরে ইউক্রেনে নির্মিত চেরোনবিল প্ল্যান্ট ছিল বিশ্বের অন্যতম পুরনো ও বৃহত্তম পরমাণু প্ল্যান্ট। এই প্ল্যান্টে ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন সহস্র মানুষ, থাইরয়েড ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল বিশাল এলাকা জুড়ে। পরমাণু বিক্রিয়ার ফলে পরবর্তীকালে বহু শিশু জন্মেছিল নানা ত্রুটি নিয়ে।

দুর্ঘটনাটির পেছনের আসল কারণ খুঁজতে অনেক বছর পেরিয়ে গিয়েছিল। অবশেষে জানা যায়, প্ল্যান্টের চারটি রিয়্যাক্টরের একটিতে করা এক ব্যর্থ পরীক্ষার ফলে হঠাৎ সৃষ্ট প্রচণ্ড উত্তাপে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে রিয়্যাক্টরের উপরের ১,০০০ টন স্টিল উড়ে যায়। পার্শ্ববর্তী প্রিপ্যায়াত শহরের আকাশ পরমাণু রেডিও একটিভ উপাদান সম্বলিত মেঘে ছেয়ে যায় এবং ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ইউরোপের বিস্তৃত অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়ে।

সোভিয়েত কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ২৮শে এপ্রিল চেরোনবিল থেকে ৮০০ মাইল দূরে অবস্থিত সুইডিশ রেডিয়েশন মনিটরিং বিভাগ স্বাভাবিকের থেকে ৪০ শতাংশ বেশি রেডিয়েশন লিপিবদ্ধ করে। ফলে তা আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।

এই বিস্ফোরণের ফলে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়া রেডিয়েশনের মাত্রা ছিল হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বিস্ফোরিত পারমানবিক বোমার থেকে কয়েকগুণ বেশি। ফলে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে, আর আহত হন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।

এছাড়াও বিস্তৃত অঞ্চল পরবর্তী ১৫০ বছরের জন্য মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে, ফলে চেরোনবিলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ মানুষকে চিরতরে স্থানান্তরিত হতে হয়েছিল। ২০০০ সালে চেরোনবিলের সর্বশেষ পরমাণু রিয়্যাক্টরটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ফজলুর রহমানের বাসার সামনে হাতবোমা নিক্ষেপ নিয়ে আইনজীবী পান্নার মন্তব্য Nov 28, 2025
img
দেশজুড়ে ভবন ও নির্মাণ কাজ অনুমোদনের জন্য পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের নির্দেশ Nov 28, 2025
img
তৃতীয় মেয়াদে ডা. শফিকুর রহমান, দায়িত্ব পালনের নতুন শপথ আজ Nov 28, 2025
img
প্রচারের ভিড়ে নিজস্ব বিশ্বাসে কোয়েল মল্লিক Nov 28, 2025
img
যত ইচ্ছে সমালোচনা করতে বললেন তাওহীদ হৃদয় Nov 28, 2025
img
রাজশাহীতে ৬০টি হারানো ফোন ফিরিয়ে দিল পুলিশ Nov 28, 2025
img
আইপিএলে দল পেলেন না বাংলাদেশের কেউই Nov 28, 2025
img
হংকংয়ে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৫ Nov 28, 2025
img
রোমাঞ্চকর জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কা Nov 28, 2025
img
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর লিটন দাসের মন্তব্য Nov 28, 2025
img
আয়ারল্যান্ডের কাছে ৩৯ রানে হারল বাংলাদেশ Nov 27, 2025
img
মেন্টরের জন্য দুই কিংবদন্তির সঙ্গে আলোচনায় নোয়াখালী Nov 27, 2025
img
ভূমিকম্পে ঢাকার যেসব এলাকা কম ঝুঁকিপূর্ণ Nov 27, 2025
img
মুক্তি পেয়েছে 'স্ট্রে/ঞ্জা/র থিংস ৫, ক্র্যাশ করল নেটফ্লিক্স Nov 27, 2025
img
নারী উদ্যোক্তা তনির মানহানির মামলায় গ্রেপ্তার আকাশ নিবির কারাগারে Nov 27, 2025
img
ফরিদপুরে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট আটক, ১৫ দিনের সাজা Nov 27, 2025
img
কোনো দলের সমালোচনা করে প্রচারণা করব না: জামায়াত প্রার্থী Nov 27, 2025
সারা বাংলাদেশ আজ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কামাল হোসে Nov 27, 2025
সেই নাঈম আজ নিজের ঘরই রক্ষা করতে পারল না Nov 27, 2025
গাজীপুর-১: কর্মী সমর্থকদের আস্থার প্রতীক হুমায়ুন কবির খান Nov 27, 2025