ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’। বিশ্বজুড়ে প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলেরা মহাসমারোহে দিনটি উদযাপন করে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, দ. কোরিয়া, ফ্রান্স, ফিলিপিন প্রভৃতি দেশে এই দিনটি অত্যন্ত জমকালো ভাবে উদযাপন করা হয়। তবে আমাদের এই উপমহাদেশেও দিবসটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিন্তু কে এই ভ্যালেন্টাইন, কেন তাকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে এত মাতামাতি?
ভ্যালেন্টাইন এবং ভালবাসার প্রতি তার অবদানের বিষয়ে বেশ কয়েকটি কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে। তাই তার প্রকৃত পরিচয়টাও রয়ে গেছে ধোঁয়াশার আড়ালে।
সর্বাধিক প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন খৃষ্টান পাদ্রী, যিনি সেন্ট ভ্যালেন্টাইন হিসেবে পরিচিত। তবে ক্যাথলিক চার্চ স্বীকৃত প্রায় তিন জন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন বা ভ্যালেন্টাইনাসের সন্ধান পাওয়া যায়।
কিংবদন্তী অনুযায়ী, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ৩য় শতকে রোমে পাদ্রীর দায়িত্ব পালনে নিযুক্ত ছিলেন। সে সময় রোমের শাসক সম্রাট ২য় ক্লাউডিয়াস গোথিকাসের ধারণা ছিল বিবাহিত পুরুষদের তুলনায় অবিবাহিত পুরুষেরা সেনা হিসেবে উত্তম। তাই তরুণদের বিবাহ নিষিদ্ধ করেন তিনি, উদ্দেশ্য ছিল অবিবাহিত তরুণদের দিয়ে অপরাজেয় সেনাবাহিনী গড়ে তোলা।
সম্রাটের এহেন খেয়ালে রোমের তরুণদের ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দিয়েছিল তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসলেন ভ্যালেন্টাইন, তিনি ক্লাউডিয়াসের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে গোপনে তরুণ-তরুণীদের বিয়ে দিতে শুরু করলেন।
তবে বিষয়টি খুব বেশিদিন সম্রাটের কাছ থেকে গোপন রইল না। অতঃপর ক্লাউডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
আরেকটি ধারণা অনুযায়ী ভ্যালেন্টাইন ছিলেন টার্নি অঞ্চলের বিশপ, যাকে ক্লাউডিয়াস রোমের বাইরে হত্যা করেছিলেন।
অন্য কিংবদন্তী অনুযায়ী, সে সময় রোমের কারাগারে আটক খৃষ্টান বন্দীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো। ভ্যালেন্টাইন মূলত সে সব খৃষ্টান বন্দীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করতেন।
বন্দীদের জেলা পালাতে সহায়তার দায়ে ভ্যালেন্টাইনকেও কারাবন্দী হতে হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে জেলে থাকা অবস্থায় তিনি এক যুবতী নারীর প্রেমে পড়েছিলেন।
তরুণীটি মাঝে মধ্যে জেলখানায় ভ্যালেন্টাইনের সাথে দেখা করতে যেত। মৃত্যুর আগে ভ্যালেন্টাইন তরুণীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যার শেষে লেখা ছিল ‘ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন’। সেকারণেই ভ্যালেন্টাইনস ডে’র চিঠি বা কার্ডে ‘ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন’ লেখার রীতি প্রচলিত হয়েছে।
এই বিশ্বাস অনুযায়ী, ২৭০ খৃষ্টাব্দে নিহত ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যু দিবস স্মরণে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ পালিত হয়ে থাকে। ঘটনা যাইহোক, সব মিলিয়ে মধ্যযুগে ভ্যালেন্টাইন ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সেরা সেন্টে পরিণত হয়েছিলেন।
অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন, ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যু দিবস ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পালনের পেছনে কুটিল রাজনীতি রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো পেগানদের লুপারকালিয়া উৎসবের খৃষ্টানীকরণ করা।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি উদযাপিত ‘লুপারকালিয়া’ রোমানদের কৃষি ভিত্তিক উৎসব। রোমান কৃষি দেবতা ফাউনাস, এবং রোমানদের প্রতিষ্ঠাতা রোমুলাস ও রেমাসকে উৎসর্গ করে এটি উদযাপন করা হতো।
নেপথ্য কাহিনী যাইহোক না কেনো, বর্তমানে ধর্মীয় বিশ্বাসের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে ভ্যালেন্টাইন ডে পলিত হয় বিশ্ব ভালবাসা দিবস হিসেবে। যেখানে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন প্রেমিক ভ্যালেন্টাইন। তথ্যসূত্র: হিস্টোরি.কম
টাইমস/এনজে/এসএন