যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ‘মনিপুর রাষ্ট্রীয় পরিষদ’ নামে প্রবাসী সরকার গঠন করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে ভারতের মনিপুর অঙ্গরাজ্যের ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক নেতারা।
মঙ্গলবার নিজেদের মনিপুরের মহারাজা লিসেম্বা সানাজাওবার প্রতিনিধি জানিয়ে এই ঘোষণা দেন ইয়ামবেন বিরেন ও নরেংবাম সমরজিত।
মহারাজাকে সরকার প্রধান করে ইয়ামবেন বিরেন নিজেকে স্বঘোষিত ওই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এবং নরেংবাম সমরজিতকে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলে ঘোষণা দেন।
তাদের এই নির্বাসিত সরকার ব্রিটেন থেকেই পরিচালিত হবে। তারা জাতিসংঘের সমর্থন অর্জনের চেষ্টা চালাবেন বলে তারা জানিয়েছেন।
আল-জাজিরা জানায়, ঘোষণায় তারা মনিপুরের মহারাজার অনুমোদন নিয়েই এই নির্বাসিত সরকার গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন। এবং বক্তব্যের সমর্থনে একটি নথিপত্রও উপস্থাপন করেন তারা।
নথিপত্রে দেখা যায়, মহারাজা ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় তাদেরকে রাজ্যের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা দিয়েছেন। তারা উভয়ই নিশ্চিত করেছে যে, সরকারের নির্যাতন ও দমন থেকে পালিয়ে তারা ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছে।
তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মনিপুরের স্বাধীন সরকারকে উপস্থাপন করার, স্বাধীনতা ঘোষণা করার ও স্বীকৃতি চাওয়ার সঠিক সময়। আমরা আজ থেকে মনিপুরের বিধিসম্মত এবং নির্বাসিত সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য জাতিসংঘের সকল সার্বভৌম রাষ্ট্রের সরকারকে অনুরোধ করছি। ত্রিশ লক্ষ মনিপুরী জনগণও স্বীকৃতি চান।
ভারতে থাকাকালীন মনিপুরের স্বাধীনতা ঘোষণা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ আমরা, মনিপুর রাজ্য কাউন্সিলের সদস্যরা ভারত সরকারের হাতে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং বিচার বহির্ভূত হত্যার মুখোমুখি হতাম- যোগ করেন তারা।
নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার অসহিষ্ণু। এই সরকার হিন্দুত্বের আধিপত্যবাদের স্বার্থে ক্ষুদ্র জাতি ও সম্প্রদায়কে নির্মূল করে দেয়ার নীতিতে বিশ্বাস করে। তাই ভারত থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে নিরাপদ ছিল না বলে জানান তারা।
স্বঘোষিত মনিপুর সরকারের নেতারা বলেন, ভারতীয় দখলদার সরকারের কঠোর আইনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে মনিপুর। এর মধ্যে রয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইন ১৯৫৮। মনিপুর দখল করার পর থেকে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
গত দশ বছরে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ মানুষকে অবৈধভাবে হত্যা করা হয়েছে সেখানে। ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষকে অবৈধভাবে আটকে রাখা হয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদন উল্লেখ করে তারা বলেন, গত কয়েক দশকে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। তারা বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারবহির্ভূত হত্যার ১ হাজার ৫২৮টিরও বেশি মামলা ঝুলে আছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী মনিপুরের মানুষকে দায়মুক্তি দিয়ে হত্যা করে।
টাইমস/এএইচ/এসআই