নির্বাচনে হেরে দিল্লিতে দাঙ্গা করছে বিজেপি

নির্বাচনে হেরে গিয়েই দিল্লিতে দাঙ্গা শুরু করেছে বিজেপি, শিব সেনার মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত ‘সামানা’ পত্রিকাটির একটি সম্পাদকীয়তে এমনটি দাবি করা হয়েছে। শিব সেনা বলছে, “এটি রহস্যজনক যে বিজেপি দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন হেরে যাওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই দাঙ্গা শুরু হয়েছে। বিজেপি হেরেছে এবং এখন দিল্লির এই অবস্থা।”

বুধবার দিল্লির চলমান সহিংসতাকে একটি ‘ভূতুরে সিনেমা’র সাথে তুলনা করে শিব সেনা বলেছে, এটি ১৯৪৮ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গার ভয়াবহ বাস্তবতাকে চিত্রিত করছে। এই “রক্তস্নাত” জাতীয় রাজধানীকে এমনভাবে কলঙ্কিত করেছে যা আগে কখনো ঘটেনি এবং এমন সময় যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে ‘ভালবাসার’ বার্তা নিয়ে এসেছেন। এই সহিংসতা থেকে স্পষ্ট বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে যে দিল্লিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

সম্পাদকীয়টিতে বলা হয় “দিল্লিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। লোকেরা লাঠি, তলোয়ার, রিভলভার সজ্জিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসছে, রাস্তায় রক্ত ঝরানো হচ্ছে। দিল্লিতে এখন ভূতুরে সিনেমার মতো পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, যা ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার চরম বাস্তবতাকে চিত্রিত করে।”

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পরে শুরু হওয়া ওই সহিংসতায় শত শত শিখের মৃত্যুর জন্য বিজেপি এখনও কংগ্রেসকে দোষারোপ করছে বলেও সম্পাদকীয়টিতে মন্তব্য করা হয়।

‘বিজেপি নেতাদের হুমকি ও উসকানি’র কথা মনে করিয়ে দিয়ে শিব সেনা বলছে যে, দিল্লির বর্তমান দাঙ্গার জন্য কে দায়ী, তা খোলাসা করা দরকার।

“জাতীয় রাজধানী এমন সময়ে জ্বলছিল, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক চলছে। সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র, রাস্তায় রক্তপাত, মানুষের আর্তচিৎকার এবং টিয়ার গ্যাসের মাধ্যমে দিল্লিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো উচিৎ হয়নি। ট্রাম্প সাহেব দিল্লিতে এসেছিলেন প্রেমের বার্তা নিয়ে, কিন্তু তার সামনে কী ফুটে উঠল? আহমেদাবাদে ‘নমস্তে’ এবং দিল্লিতে সহিংসতা! এর আগে কখনোই দিল্লিকে এভাবে বদনাম করা হয়নি,” বলেও উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য যে, ট্রাম্প গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে তার ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারির ভারত সফর শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে গত রোববার থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে উত্তর পূর্ব দিল্লির বেশ কয়েকটি অঞ্চল যে সংঘাতের শিকার হয়েছে, তাতে এখন পর্যন্ত বিশ জন মারা গেছেন এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে শিব সেনা বলেছে, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেছে যে ট্রাম্পের জাতীয় রাজধানীতে সফরকালে হিংসাত্মক ঘটনাটি ঘটিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ভারতকে বদনাম করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সিএএ-কে কেন্দ্র করে ঘটা এই সহিংসতার ষড়যন্ত্রের কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর না জানা থাকলে তা জাতীয় সুরক্ষার জন্য ক্ষতিকারক। একই রকম সাহসের সাথে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করতে কোনও সমস্যা নেই, যেভাবে ৩৭০ এবং ৩৫ এ ধারা রদ করা হয়েছিল।”

আরো বলা হয়েছে যে, “কয়েকজন বিজেপি নেতা হুমকি ও উসকানিমূলক ভাষায় কথা বলার পরে সহিংসতা শুরু হয়েছিল। তাহলে, কেউ কি চাইছিল যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন (শাহীন বাগে) দাঙ্গায় বদলে যাক? (তারা) কমপক্ষে ট্রাম্পের দেশ ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারত।”

বিজেপির প্রাক্তন মিত্র উদ্ধব ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন ‘শিব সেনা’ দলটি এখন মহারাষ্ট্রে এনসিপি এবং কংগ্রেসের সাথে জোট করে ক্ষমতা ভাগাভাগি করছে। তথ্যসূত্র: পিটিআই।

 

টাইমস/এনজে/এইচইউ

Share this news on: