আবরার হত্যায় মনিরেরও স্বীকারোক্তি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংস নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন এজাহারভুক্ত আসামি মনিরুজ্জামান মনির। হত্যাকাণ্ডে সে নিজেও অংশ নিয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। 

গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে তিনি আবরারকে নির্যাতনের আদ্যপান্ত বর্ণনা দেন।

জবানবন্দিতে মনির বলেন, ‘১৫তম ব্যাচের বড় ভাইরা ডাকতে বলেছিলেন। অনিক, রবি ও রাসেলের নির্দেশে আমি আবরারকে তার রুম থেকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যাই। সেখানে অনিক ও রবিন ছাড়াও আরও অনেকে উপস্থিত ছিল। আবরারের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপে থাকা তথ্য দেখে আবরারকে শিবির হিসেবে সন্দেহ করা হয়। এর পর আবরারের কাছ থেকে হলে আরও কারা কারা শিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ তা জানতে চাওয়া হয়।

এ সময় আবার চুপ থাকায় প্রথমে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। এর পর তাকে যে যার মতো চড়থাপ্পড় মারে। একপর্যায়ে অনিক স্টাম্প দিয়ে আবরারকে পেটাতে থাকে। ওই সময় আমিও আবরারকে চড়থাপ্পড় মারি। মনির তার স্বীকারোক্তিতে আরও বলেন, ‘সকাল, জিসান, তানিম, সাদাত, মোরশেদ বিভিন্ন সময় ওই কক্ষে আসে এবং আবরারকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পেটায়।

মোয়াজ, বিটু, তোহা, বিল্লাহ ও মোজাহিদও ঘুরেফিরে এসে আবরারকে পেটায়। একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কয়েকবার বমিও করে। একপর্যায়ে তাকে ধরাধরি করে তানিম, মেয়াজ, জেমি সিঁড়ির দিকে নিয়ে যায়। পেছনে মোরশেদ, মুজাহিদ, তোহা, বিল্লাহ, মাজেদও ছিল। পরে ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তার এসে বলেন, সে মারা গেছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে গত ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। খুনের পর নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করারও চেষ্টা চালায় খুনিরা।

তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।

হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলিট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। রোববার পর্যন্ত চারজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা এবং মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হয়েছেন এ এস এম নাজমুস সাদাত।

এদের মধ্যে ১৩ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। আর ১৯ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

 

টাইমস/এমএস 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতে লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে Apr 26, 2024
img
৪৬তম বিসিএসের প্রিলি আজ, মানতে হবে যত নির্দেশনা Apr 26, 2024
img
পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকসহ আটক ৩ Apr 26, 2024
img
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য জানালেন সাকিব Apr 25, 2024
img
গাজায় ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেয়ার অভিযোগ Apr 25, 2024
img
দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড, কতদিন থাকবে জানাল অধিদপ্তর Apr 25, 2024
img
শিক্ষক নিয়োগ: পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে হাতে পৌঁছে যেত উত্তরপত্র Apr 25, 2024
img
বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকে তাকালে আমরা লজ্জা পাই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী Apr 25, 2024
img
রবিবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস Apr 25, 2024
img
এক দিনের ব্যবধানে আরও কমলো স্বর্ণের দাম Apr 25, 2024