একজন মেধাবী মেডিকেল ছাত্রের অসমাপ্ত গল্প!

অদম্য মেধাবী ছিলেন রাজকুমার। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পেয়েছিলেন বৃত্তি। এরপর মেধার জোরেই ঢাকা কলেজের পাঠ শেষে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলোজি বিভাগে। কে-৪০ ব্যাচের মেধাবী ছাত্রদের তালিকায় ‘রাজকুমার শীল’ নামে জায়গা হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য তার বিরূপ বটে। তা না হলে সেই রাজকুমার শীল এখন পথে পথে কেন ঘুরবেন। যার হওয়ার কথা ছিল ডা. রাজকুমার শীল, সে আজ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মায়ের পেছন পেছন পথ চলেন।

ঘটনাটি সিনেমা নাটকের গল্পকেও হার মানবে হয়তো। তারপরও আসুন সত্যটা আরও একটু জানি-

দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা রাজকুমার শীল ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এরপর তার ভাগ্যে জোটেনি সঠিক চিকিৎসা। যে কারণে আজ তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। সম্প্রতি মায়ের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে গেলে রাজকুমার শীলকে প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা।

এ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালীর ‘আমার বন্ধু রাজকুমার শীল’ শিরোনামে সংগৃহীত লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হল-

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েকজন মেডিকেল অফিসার ডিউটিতে আছি। এমন সময় প্রায় ৭০ বছর বয়সী একজন মহিলা ৪৮ আর ৫২ বছর বয়সের দুজন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেন। কি সমস্যা জিজ্ঞেস করায় হাতের কাগজগুলো এগিয়ে দিয়ে বললেন, প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য দরখাস্ত করবেন ছেলের জন্য। অনেক কাগজের সাথে পাবনা মানসিক হাসপাতালের দু’টি ছাড়পত্র পেলাম। প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না, কোন ছেলে রোগী।

পরে ভদ্রমহিলা বুঝিয়ে বললেন, তার দুই ছেলের জন্যই দরখাস্ত করবেন। দুইজনেরই একই অসুখ। দুইজনের মধ্যে একজনের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সই দেখে কিছুটা আশ্চর্য হলাম। নাম লেখা রাজকুমার শীল। হাতের লেখাটা কেন যেন তার চেহারার সাথে মিলছে না। সুন্দর লেখা। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কতদূর পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। তিনি বললেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম। নিজের শ্রবণেন্দ্রিয়কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

একে একে রাজকুমার তার সব কিছু বললেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে-৪০ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফার্মাকোলজিতে ফেল করে মানসিক অসুস্থতার (সিজোফ্রেনিয়া) জন্য বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ ছিলেন ১৪/১৫ বছর। সে সময় একটি কারখানায় কাজ করতেন। ১ বছরের মত পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন রাজকুমার।

কথার ফাঁকে অনুমতি নিয়ে এক সময়ের এই মেধাবী মানুষটির ছবি তুললাম। কে-৪০ ব্যাচের আমার শ্রদ্ধেয় একজন স্যারের ছবি দেখিয়ে বললাম চিনতে পারেন কিনা? তিনি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালেন। এসময় তিনি আবোগপ্লুত হয়ে পড়েন কিছু সময়ের জন্য। কে জানে, সুস্থ থাকলে হয়ত এই রাজকুমার শীল হয়ে উঠতেন স্বনামধন্য ডা. রাজকুমার শীল।

ডা. বেলায়েত আরও লিখেছেন-

এক রত্নগর্ভা মায়ের করুণ আকুতি: রাজকুমারের আরেক ভাই একই রোগে আক্রান্ত। রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি।

রাজকুমার এখন একটি ভুষি কারখানায় কাজ করেন। দিন শেষে ৩০-৫০ টাকা মজুরি পান। আর এভাবেই চলছে এ মেধাবী মানুষটির জীবন।

 

 

টাইমস/এসএন/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিএনপি দাসত্ব করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য : ওবায়দুল কাদের Apr 27, 2024
img
আজ ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না রাজধানীর যেসব এলাকায় Apr 27, 2024
img
গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা শুরু আজ, কেন্দ্রে থাকবে পানি ও চিকিৎসা ব্যবস্থা Apr 27, 2024
img
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা Apr 27, 2024
img
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ Apr 27, 2024
img
আ.লীগ নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর Apr 26, 2024
img
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ চুয়েট, খোলা থাকবে হল Apr 26, 2024
img
প্রথমবার এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের জেসি Apr 26, 2024
img
গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024