বেসরকারি হাসপাতালগুলো চিকিৎসার নামে ‘ডাকাতের’ মতো টাকা নিচ্ছে: মেয়র আতিক

চিকিৎসা ও পরীক্ষার নামে বেসরকারি হাসপাতালগুলো মানুষের কাছ থেকে ‘ডাকাতের মত’ টাকা নিচ্ছে মন্তব্য করে ক্ষোভ ঝেরেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। হাসপাতালগুলো বেশি টাকা নিলেও নিজেদের চিকিৎসাবর্জ্য ঠিকমত ব্যবস্থাপনা করছে না জানিয়ে শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান শুরুর তাগিদ দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সারা দেশের চিকিৎসা বর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক সভায় এ কথা বলেন আতিক। সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র আতিক বলেন, বিভিন্ন হাসপাতাল যেভাবে মানুষ থেকে ডাকাতির মাধ্যমে, ডাকাতির মতন করে... তারা পয়সা নিচ্ছে। হাসপাতালে ঢোকার আগে পয়সা দিতে হচ্ছে।... জমিজমা বেইচ্যা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

বিভিন্ন হাসপাতালের বিল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা করছে বিভিন্ন হাসপাতাল। চেকআপের বিল কিন্তু অনেক বেশি। আপনি একটা চেকআপ করতে দেন- ইউরিন চেকআপ করেন, ব্লাড চেকআপ করেন, কথায় কথায় চেকআপ হচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু তাদের যে বিল, তাদের যে হাসপাতালের বিল, তাদের বিভিন্ন পরীক্ষার যে বিল এটি সম্পূর্ণ একটি ডাকাতির মতন কিন্তু, এটি হতে পারে না।

হাসপাতালগুলো বিভিন্ন সেবার বিপরীতে বেশি বিল আদায় করলেও নিজেদের চিকিৎসাবর্জ্যগুলো ঠিকমত ব্যবস্থাপনা করছে না বলে ক্ষোভ জানান মেয়র আতিক।

তিনি বলেন, তারা বিল নেবে কিন্তু তাদের বর্জ্যগুলো কি ঠিকমত ফেলছে? তারা তাদের বর্জ্যগুলো ঠিকমত ফেলছে না, এটি মনিটরিং করা হচ্ছে না। যত্রতত্রভাবে তারা তাদের বর্জ্যগুলোকে ফেলছে।

আমি নিজে দেখেছি, আমার কাছে ছবি আছে যে বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট করার পরে ইউরিন, ব্লাড, স্টুলের স্যাম্পল রাস্তার উপর ফেলে দিয়েছে, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, এটিই হল বাস্তবতা। তাই ক্লিয়ার মেসেজ দেয়া দরকার, কোনো ধরনের বর্জ্য রাস্তায় তো ফেলার প্রশ্ন ওঠে না। আইনকেও তারা বৃদ্ধাগুলি দেখাচ্ছে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আজকের মিটিং থেকে ডেট নির্দিষ্ট করে দিন। আমি দেখেছি সরকারি হাসপাতালের পেছনে খোলা জায়গায় তাদের বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে, এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালই যদি করে, আমি তো অন্য হাসপাতালের কথা বললাম না, উনারা পোড়ান না আবার, উনারা লুকিয়ে লুকিয়ে কখন যে অজান্তে কোন খালেবিলে ফেলে দেয় তাও কিন্তু আমরা জানি না।

তিনি বলেন, হাসপাতালগুলো আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা অনেক বড়লোক হচ্ছে। ভালো কথা, কিন্তু তারা তাদের নিয়ম মেনে চলছে না, তাদের একটি নিয়মের মধ্যে আনতেই হবে।

সবকিছুই অবৈধ হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে মেয়র আতিক বলেন, গ্যাসের লাইন অবৈধ, ইলেকট্রিক লাইন অবৈধ, বিলবোর্ড অবৈধ, সাইনবোর্ড অবৈধ, রাস্তার মধ্যে যত ধরনের রড, সিমেন্ট, বালি সবই অবৈধ। কিন্তু এই অবৈধ কিন্তু আর দেয়া যাবে না। তাই আজকের মিটিং থেকে একটা মেসেজ দেয়া দরকার, যারা অবৈধভাবে একটার পর একটা কাজ করে যাচ্ছে তাদের জন্য মেসেজ।

অবৈধ বিলবোর্ড উদ্ধারে অভিযান শুরুর পর এখন অনেকেই বিলবোর্ডের বিল দিতে চাচ্ছে জানিয়ে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, আমার মনে হয় এ রকম একটা সমন্বিতভাবে অভিযান দরকার। যারা রাস্তায় কোনো ধরনের মেডিকেল বর্জ্য, ইট ইজ এ কিলার। মেডিকেল বর্জ্যটা সাইলেন্ট কিলার, আমাদের কিল করে দিচ্ছে। বর্জ্যগুলোকে কোন জায়গায় ফেলব, কোথায় রাখব-এসব শৃঙ্খলার মধ্যে আনা দরকার।

কবে থেকে অভিযান চালানো শুরু হবে সেই তারিখ দিতে মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে মেয়র বলেন, আমি মনে করি অভিযানের কোনো বিকল্প নেই।

গুলশান লেকের পানির অবস্থা খারাপ হওয়ায় এবার মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে সেখানে মাছের পোনা অবমুক্ত করা যায়নি জানিয়ে মেয়র আতিক বলেন, পরে একটি পুকুরে সেই পোনা ছাড়া হয়।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: