ফেনীতে বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিআরডিবি) এক নারী কর্মী আত্মহত্যা করেছেন।
ওই নারীর নাম আনোয়ারা বেগম ননি (৫৩)।
আত্মহত্যার আগে তিনি একটি চিরকুট লিখে গেছেন। সেখানে তিনি তার মৃত্যুর জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তাকে দায়ী করেছেন।
শহরের বারাহিপুরের সাহেব বাজারে ভাড়া বাসায় শুক্রবার সন্ধ্যায় গলায় ফাঁস দিয়ে আনোয়ারা বেগম আত্মহত্যা করেন।
ঋণের টাকা আদায়ে ব্যর্থ ও দীর্ঘ সময় বেতন বন্ধ করে দেয়ায় তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে সহকর্মী ও স্বজনরা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, প্রায় ২৮ বছর ধরে বিআরডিবির ফুলগাজী শাখায় পল্লী দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচিতে (পদাবিক) কর্মরত ছিলেন আনোয়ারা বেগম ননি।
চাকরিকালীন বিভিন্ন গ্রাহককে প্রায় ২৫-২৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দেন তিনি। ঋণের টাকা যথাসময়ে গ্রাহকরা পরিশোধ না করায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার ওপর চাপ প্রয়োগ করেন।
গত ৩১ জানুয়ারি দুপুরে উপপরিচালক শংকর পাল ও সহকারী পরিচালক ফুলগাজী ফিরোজ আলমের নেতৃত্বে ফুলগাজী বিআরডিবি অফিসে ফুলগাজী উপজেলার ভৈরাগপুর ও দৌলতপুর সমিতির সদস্যদের সঙ্গে ঋণের টাকা আদায় নিয়ে বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তা মাঠকর্মী আনোয়ারা বেগম ননিকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এ অপমান সইতে না পেরে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে সাহেব বাজার এলাকার ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন আনোয়ারা বেগম ননি।
ফেনী মডেল থানার ওসি (অপারেশন) মাহাবুবুর রহমান জানিয়েছেন, পুলিশ লাশের পাশ থেকে দুটি চিরকুট উদ্ধার করে। চিরকুটে তার মৃত্যুর জন্য জেলা কর্মকর্তা শংকর পাল ও উপজেলা কর্মকর্তা ফিরোজ আলমকে দায়ী করে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছেন।
তিনি আরও জানান, অন্য একটি চিরকুটে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও দোকানে ২৩ হাজার দেনা-পাওনা রয়েছে বলেও লিখে গেছেন।
চিরকুটের বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে কল করা হলে উল্টো মাঠকর্মী আনোয়ারা বেগম ননির বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেন বিআরডিবির ফেনীস্থ উপপরিচালক শংকর কুমার পাল ও ফুলগাজীর সহকারী পরিচালক ফিরোজ আলম।
তারা জানান, আনোয়ারা বেগম বিভিন্ন সমিতির সদস্যদের ভোটার আইডিসহ কাগজপত্র সংগ্রহ করে ফুলগাজী অফিস থেকে প্রায় ২৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। ফুলগাজীর ভৈরাগপুর ও দৌলতপুর সমিতির ৯ লাখ টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছে এবং পরিশোধ করবে বলে স্বেচ্ছায় ৩১ জানুয়ারি লিখিত দিয়েছে।
তবে বিআরডিবির জেলা অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, ফেনী বিআরডিবি অফিস থেকে ঋণ নিতে হলে কর্মকর্তাদেরকে শতকরা ২০ হারে কমিশন দিতে হয়। এতে করে একজন দরিদ্র সদস্যরা ঋণ নিয়ে টাকা পরিশোধ করতে চান না।
ফেনী বিআরডিবি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন শিকদার জানান, উপপরিচালক শংকর কুমার পালের হয়রানির কারণে জেলাজুড়ে বিআরডিবির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আমরা ইতিমধ্যে তার অপসারণ চেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর ডিও লেটারসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি।
টাইমস/এক্স