ট্রাম্পের কাছে নালিশ করতে যেভাবে গেলেন প্রিয়া সাহা

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে নালিশ করে আলোচনায় আসা প্রিয়া সাহা এবার তার সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। কারও সঙ্গে কথোপকথনের প্রশ্নোত্তরধর্মী এ বার্তায় তিনি তার বক্তব্যের পক্ষেই কথা বলেছেন।

তিনি দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে দেয়া বক্তব্য থেকেই তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

ইউটিউবে প্রকাশিত ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মোবাইল হাতে নিয়ে তিনি এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন, ওই ব্যক্তির বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন প্রিয়া সাহা। তবে সেই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি।

প্রিয়া সাহা কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নালিশের সুযোগ পেলেন তা প্রকাশিত ভিডিওতে তিনি বলেছেন।

প্রিয়া সাহা বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আমাকে পাঠায়নি। আমাকে আইআরআর থেকে সরাসরি ফোন করা হয়েছে, ইমেইল পাঠানো হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

প্রিয়া সাহা বলেন, গত মাসের ১৪ তারিখে আমি ইমেইলটা পেয়েছি। প্রথমে আমি সেভাবে রেসপন্স করিনি। তারপর বারবার তারা মেইল করেছে। ১৫ তারিখে আমি ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছি। সেদিন আমি সন্ধ্যার পর এসেছি।

নালিশের ব্যাপারে প্রিয়া সাহা বলেন, প্রথমে তো এই কথাগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা। ২০০১ সালে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্বাচন-উত্তর যখন ৯৪ দিন ধরে চরম নির্যাতন চলছিল, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে সারা পৃথিবীতে ঘুরেছেন। সমস্ত জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে, তার অনুসরণে আমি বলেছি। এবং যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে কোনো জায়গায় বলা যায়। এটা আমি তার কাছে শিখেছি।

প্রিয়া সাহা বলেন, ২০০১ সালে তখনকার যে সাম্প্রদায়িক সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগের ওপর চরম নির্যাতন; তার বিরুদ্ধে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সারা পৃথিবীতে কীভাবে সংগ্রাম করেছেন। সেটা আপনারা সবাই অবগত আছেন। আসলে বিষয়গুলো আপনারা নিজেরাও জানেন

তিনি বলেন, প্রতি বছর সরকার যে সেন্সাস রিপোর্ট বের করে, সেই সেন্সাস রিপোর্ট অনুসারে দেশভাগের সময় দেশের সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ছিল ২৯.৭ ভাগ। আর এখনকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা হলো ৯.০৭ ভাগ।

এখন দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৮০ মিলিয়নের মতো। সে ক্ষেত্রে জনসংখ্যা? যদি একই হারে বৃদ্ধি পেত তাহলে অবশ্যই যে জনসংখ্যা আছে সেই জনসংখ্যা, অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে যা হারিয়ে গেছে, সেই জনসংখ্যার সঙ্গে আমার তথ্যটা মিলে যায়।

প্রিয়া সাহা আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি কিন্তু পরিসংখ্যান বইয়ের ওপর ভিত্তি করে, অর্থাৎ সরকারের প্রকাশিত বইয়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ৬৩২ জন লোক হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রিয়া বলেন, যদি স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া, যেভাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই একইভাবে যদি ধর্মীয় সংখ্যালঘু ২৯.৭ শতাংশ থাকত, তাহলে এই জনসংখ্যাটা হতো। কিন্তু তা নাই। এই যে ক্রমাগতভাবে কমে গেছে, এটা যে নাই, কেন, সেটাই আমি বোঝাতে চেয়েছি। এই কথাগুলো তো সাধারণ কথা। এটা একটা সত্য কথা।

প্রিয়া সাহা বলেন, আমার বাড়ি পিরোজপুরে। সেখানে ২০০৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৪০টি পরিবার ছিল; এখন মাত্র ১৩টি পরিবার আছে। তাই আমার গ্রামের মানুষগুলোকে আমি দেখেছি।

২০১১ সালে যখন অধ্যাপক আবুল বারকাত এই গবেষণা করেন, তখন কিন্তু তিনি সিরডাপ মিলনায়তনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ, প্রথিতযশা সাংবাদিকবৃন্দসহ ব্যাপক মানুষের সামনে এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেন। এবং তৎকালীন সকল গণমাধ্যম দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সকল রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তারপর গণমাধ্যম নিয়মিতভাবে, যখন যে মানুষ যেখান থেকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে, তারা রিপোর্ট পেলেই তা প্রকাশ করে। এবং যখন যেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে, আপনারা সে কাজটা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করছেন।

প্রিয়া বলেন, আমাকে ডেকে নিয়ে এসে বলল যে, চলেন আমরা হোয়াইট হাউসে যাব। আমি আর বুঝি নাই। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে সবাই গাড়িতে করে চলে গেল।

স্যাম ব্রাউন দ্যাট অ্যাম্বাসেডর অ্যাপলায়েডের নেতৃত্বে আমরা গেলাম। কিছুক্ষণ বসার পরে শুনতে পারলাম, খুব সুনসান খুব গোছগাছ চলতেছে যে বিষয়টা কী। আমরা একটা রুমে বসলাম। পাশের রুমেই প্রেসিডেন্ট আসবেন। তার সঙ্গে আমাদের দেখা হবে কয়েক মিনিটের মধ্যে।

ওইখানে কিছু প্রটোকল আছে, সব ব্যাগট্যাগ সবকিছু দেখেটেকে যেতে হয়, কীভাবে ব্যাজট্যাজ পরতে হয়, সেগুলো পরে সবাইকে সিরিয়ালি বিভিন্ন ধরনের নাম্বারিং করা হয়। নিয়ে আমাদের দাঁড় করাল। তারপর প্রেসিডেন্ট আসলেন।

যখন অন্যরা কথা বলছেন দেখলাম যে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। আমিও আমার কথা বললাম।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আ.লীগ নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর Apr 26, 2024
img
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ চুয়েট, খোলা থাকবে হল Apr 26, 2024
img
প্রথমবার এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের জেসি Apr 26, 2024
img
গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চলমান তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভেঙেছে ৭৬ বছরের Apr 26, 2024
img
অলসতা কাটিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতে করণীয় Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি Apr 26, 2024
img
সেন্সর বোর্ডে আটকে গেল রায়হান রাফীর নতুন সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ Apr 26, 2024