অফিস টাইম। গণপরিবহন সংকট থাকায় রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। একটা বাস আসছে তো, শত শত মানুষ দৌড়ে যাচ্ছেন বাসের কাছে। বাসে উঠার সুযোগ পাচ্ছেন কয়েকজন। কারণ করোনা রোধে সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করছে বাসগুলো।
আমি গণপরিবহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যাবো। বাসে উঠা প্রায় অসম্ভব। পাঠাও অ্যাপে কল করে কোন গাড়ি পাচ্ছি না। এমন সময় একটি ফাঁকা সিএনজি অটোরিক্সা পেলাম। মনে করলাম দ্বিগুণ/তিনগুণ ভাড়া চাইবে হয়তো।
কিন্তু না। তিনি নির্ধারিত ভাড়ায় আমাকে গন্তব্যে পৌছে দিতে রাজি হলেন। আমি তার সম্মতিতে আশ্চর্য হলাম। নিজের কৌতুহল চেপে না রেখে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তো দ্বিগুণ ভাড়া নিতে পারতেন অথবা ৫০ টাকা বেশিও দাবি করতে পারতেন। মোড়ে মোড়ে এত লোক গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে। সবাই অফিসগামী। আপনি অন্যদের মত সুযোগ নিলেন না কেন?
আমার প্রশ্ন শুনে মৃদু হেসে অটোরিক্সা চালক বললেন, ঝড় বৃষ্টি যাই হোক যাত্রী যতই থাকুক আমি নায্য ভাড়ায় গাড়ি চালায়।
লোকটি কথায় আমি অবাক হলাম। এবার সিএনজি অটোরিক্সায় চোখ বুলালাম। কি সুন্দর পরিপাটি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ভালো লাগলো। এরপর যাত্রাপথে আলাপচারিতায় জানলাম শফিকুল ইসলামের বাড়ি পাবনার সুজানগরে। তিনি ২ ছেলে এক মেয়ের গর্বিত পিতা।
বড় ছেলে পাবনার স্থানীয় স্কুলে ৮ম শ্রেণি ও ছোট ছেলে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। আর একমাত্র মেয়েটি তৃতীয় শ্রেণিতে। প্রায় ১০ বছর যাবৎ তিনি সিএনজি চালান। ছয় বছর গাজীপুরে সিএনপি অটোরিক্সা চালিয়েছেন। শেষ চার বছর তিনি ঢাকায়।
সংসার চালানোর খরচ যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সে ভাবে আয় বাড়েনি। যেকারণে তিনি গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী সন্তানকে রেখে এসেছেন। কারো বিরুদ্ধে শফিকুল ইসলামের কোনও অভিযোগ নেই। শুধু সততার সঙ্গে বাকি জীবনটুকু তিনি বাঁচতে চান। ছেলে মেয়েকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি।
ধন্যবাদ। অটোরিক্সা ড্রাইভার শফিক ভাই। আপনি ৫০/১০০ টাকার জন্য নিজের আদর্শ নষ্ট করেননি। টাকার অভাবে স্ত্রী সন্তানকে কাছে রাখতে পারেননি। তাই বলে আপনার দু:খ আছে। কিন্তু অন্যায়ভাবে টাকা অর্জন করতে আপনি রাজি নন। সৃষ্টকর্তা আপনার পরিবারের সকল সদস্যকে সুস্থ রাখুন। আপনার সন্তান মানুষের মত মানুষ হোক এই আমার প্রার্থনা।
টাইমস/এসএন