দেশের মানুষ ভালো থাকলে একটি গোষ্ঠী অসুস্থ হয়ে পড়ে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকলে একটি গোষ্ঠী অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একটু ভাল থাকলে কিছু মানুষ আছেন যারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশে যদি কোনো ‘মার্শাল ল’ জারি হয়, অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতা দখল করে, তখন এই গোষ্ঠী খুবই ফুর্তিতে থাকে; তাদের মূল্য বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, জনগণের মূল্য তাদের কাছে কিছু না। নিজের ক্ষমতায়ন একটু ক্ষমতার বাতাসের আশায় তারা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় ব্যস্ত থাকে।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী চকবাজারের চুড়ি হাট্টি অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

আলোচনা সভায় শুরুতে অগ্নিকান্ডে নিহতদের স্মরণে দাড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, একুশে পদকপ্রাপ্ত উপন্যাসিক এমদাদুল হক মিলন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আক্তারুজ্জামান, মেরিনা জাহান কল্পনা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একে এম রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমূখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, একটানা ১০ বছর সরকারে থেকে দেশের উন্নয়ন করেছি বিধায় জনগণ আবার আমাদের ক্ষমতায় এনেছে। একটানা ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর কাছে একটা মর্যাদা পেয়েছে এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। তাদের ভোটের মর্যাদা আমাদের রাখতে হবে। আমরা বাংলার মানুষকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা থেকে মুক্তি দিতে কাজ শুরু করেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন উন্নত জীবন পায় সেভাবে আমরা দেশকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের সহযোগিতা পেলে ২১ সালের মধ্য দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। ২০৪১ সালের মধ্য দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা উপহার দিব। এজন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ আমরা প্রণয়ন করেছি এবং এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করেছি। ২০২০ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ধুমধাম করে পালন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

বাংলাদেশ একটি ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাঙালী জাতি বিশ্বের মধ্যে মাতৃভাষার জন্য রক্ত দেয়া জাতি।

তিনি বলেন, আজকে এই বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের সব থেকে গৌরবের ভাষার জন্য রক্ত দেয়া যে মাতৃভাষার ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। ভারত ভাগে বেশি অবদান ছিল এই পূর্ব পাকিস্তানের। অথচ তারা (পাকিস্তান) প্রথম আঘাতটি দিয়েছে বাংলা ভাষার ওপর। বাংলা ভাষায় কথা বলা যাবে না, বাংলা ভাষায় চিন্তা করা যাবে না।

মাতৃভাষা বাংলা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাওয়ার ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুজন প্রবাসী বাঙালি রফিক এবং সালাম বাংলাকে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার প্রথম উদ্যোগ নেয়। তারা কয়েকজন মিলে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য একটি সংগঠন গড়ে তোলে।

২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ঘোষণা করার জন্য তারা জাতিসংঘে একটি আবেদন করেছিল। কিন্তু কোন রাষ্ট্র আবেদন না করলে সেটিয়ে কোনও ঘোষণা অনুমোদন হয় না। এটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করি।

সেখান থেকে ঘোষণা দেয়া হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তিনি বলেন, এখন অনেক দেশে আমাদের শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছে এবং একুশে ফেব্রুয়ারি মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হচ্ছে। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় পাওয়া।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জাতিকে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, এমনকি এ জাতির অস্তিত্বেই বিশ্বাস করত না। সেজন্য তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন কোনো উন্নতি-অগ্রযাত্রা হয়নি এদেশের। আর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারলো, তখনই দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন হয়েছে। সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই জনগণের প্রতি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলা ভাষা একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

জনগণের যে আস্থা নিয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি সেই মর্যাদা রাখতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশ যেন ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

 

টাইমস/জেডটি

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চলমান তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভেঙেছে ৭৬ বছরের Apr 26, 2024
img
অলসতা কাটিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতে করণীয় Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি Apr 26, 2024
img
সেন্সর বোর্ডে আটকে গেল রায়হান রাফীর নতুন সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিরোধী দল দেখে না: কাদের Apr 26, 2024
img
চলতি বছরই থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ২ Apr 26, 2024
img
পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত Apr 26, 2024
img
নতুন করে বেড়েছে সবজি-মাংসের দাম Apr 26, 2024