অনুমোদন ছিল না গাজীপুরের ফ্যান কারখানার, ১০ লাশ হস্তান্তর

গাজীপুর সদর উপজেলায় লাক্সারি ফ্যান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১০ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত ফ্যান কারখানাটির কোনো অনুমোদন, ফায়ার লাইসেন্স এবং পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সোমবার বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুল ইসলাম।

নিহতরা হলেন- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মার্তা এলাকার নবীজ উদ্দিনের ছেলে শামীম হোসেন (২২), উপজেলার মার্তা হাতানিপাড়া এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে রাশেদ (৩২), গাজীপুর সদর উপজেলার কালনি এলাকার সাইফুল খানের ছেলে ফয়সাল খান (২১), একই উপজেলার কেশরিতা এলাকার বীরবল দাসের ছেলে উত্তম দাস (২৬), গাজীপুর নগরের আতারকুল এলাকার লাল মিয়ার ছেলে মো. পারভেজ (২৫), রংপুরের তাইজুদ্দিনের ছেলে ফরিদ উদ্দিন (১৫), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের উপজেলার মোরশেদ মিয়ার ছেলে ইউছুব মিয়া (২৪), নরসিংদীর বেলাব উপজেলার চর কাশিনগর এলাকার মাজু মিয়ার ছেলে সজল মিয়া (২০), দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার দাউদকান্দি এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে লিমন হোসেন (২২) ও ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার রাঘবপুর এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে তরিকুল ইসলাম (২০)।

শাহীনুল ইসলাম বলেন, লাশের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করেছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। যথেষ্ট যাচাইবাছাই করে নিশ্চিত হয়েই লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাশ জানান, লাশের ময়নাতদন্ত ও শনাক্ত করার পর হাসপাতালের মর্গ থেকে সোমবার দুপুরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ১০টি লাশের এবং উপস্থিত স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এর আগে রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশোরিতা এলাকার লাক্সারি ফ্যান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে দগ্ধ হয়ে ১০ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হন আরও দুইজন।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিচালক ফরিদ আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয় তথা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন ছাড়া কারখানাটি চলছিল। স্থানীয় একটি আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে দোতলার উপরে টিনের শেড নির্মাণ করে ফ্যান তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়। কারখানা স্থাপনে কোনো ধরনের নিয়ম মানা হয়নি, কারখানা স্থাপনের অনুমতি নিতে আবেদনও করেনি এই কারখানা কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে নিয়মানুয়ায়ী মামলা দায়ের করা হবে। এছাড়া আইন অনুযায়ী নিহত ও আহতদের কারখানার মালিকের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মামুন অর রশিদ বলেন, কারখানাটির কোনো ফায়ার লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল না।

এ ব্যাপারে লাক্সারি ফ্যান কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ হোসেন ঢালী বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং তারা যে উৎসব বোনাস ও বেতন পেতেন তাদের পোষ্যদের আজীবন তার সুবিধা দেওয়া হবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার লাশ হস্তান্তরের সময় জেলা প্রশাসন ঘোষিত ২৫ হাজার টাকা এবং মালিকের পক্ষ থেকে আরও ২০ হাজার টাকা প্রতিলাশের স্বজনদের দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, ঘটনা তদন্তে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহিনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন। 

জয়দেবপুর থানার ওসি মো. জাবেদ আলী জানান, সোমবার বিকাল পর্যন্ত ওই ঘটনায় মামলা হয়নি।

গাজীপু‌রে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১০ জনের পরিচয় মিলেছে

 

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: